ভূগোল ও পরিবেশ নিয়ে পড়ে কি হওয়া যায় | ভূগোল ও পরিবেশ সাবজেক্ট রিভিউ

ভূগোল ও পরিবেশ নিয়ে পড়ে কি হওয়া যায় | ভূগোল ও পরিবেশ সাবজেক্ট রিভিউ। ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা। Geography শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ “ভূগোল” । আসলে Geography শব্দটি ভাংলে দাঁড়ায় Geo এবং Graphy । Geo এর অর্থ “ভূ” বা পৃথিবী । আর Graphy অর্থ বর্ণনা করা । সে হিসেবে Geography শব্দের সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ হলো “ভূবিদ্যা / ভূবিজ্ঞান” । কিন্তু ইংরেজি থেকে বাংলা করার সময় ভাষাবিদরা এর ভুল ব্যাখ্যা করে ফেলেন । তারপর থেকে ঐ ভুল অর্থাৎ “ভূগোল” শব্দটিই ব্যবহার হয়ে আসছে । তবে নিকট ভবিষ্যতে এই ভুল অর্থটি পরিত্যাগ করার পরিকল্পনা চলছে । সারা পৃথিবীতে ভূগোলের ইংরেজি প্রতিশব্দ “Geography” ব্যবহার করা হয় । ভুল বাংলা অর্থটি শুধুমাত্র “ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং বাংলাদেশে ” ব্যবহার করা হয়।

এটি এমন একটি বিজ্ঞান যেটা “সামাজিক বিজ্ঞান” ও “প্রাকৃতিক বিজ্ঞান” এর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। Geography এর জনক বলে অভিহিত করা হয় বিখ্যাত গ্রীক পণ্ডিত “ইরাটস থেনিস” কে । মূলত গ্রীক যুগ থেকেই Geography এর সূত্রপাত হয় । কালক্রমে হাজার বছর ধরে চলমান এই শাখা বিকাশ লাভ করতে করতে আজকের Modern Geography তে পরিণত হয়েছে ।

Modern Geography তে পরিণত হতে ফ্রান্স; জার্মানি, ইংল্যান্ড , রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবদান অনস্বীকার্য । Geography পৃথিবীকে নিয়ে গবেষণা করে, আর জগতের যাবতীয় বিজ্ঞানের শাখা ধীরে ধীরে পৃথিবীরই নানান উপাদান ও ক্রিয়াকর্ম নিয়ে আলাদা আলাদা আলোচনা করে বিধায় Geography কে বিজ্ঞানের জননী বলে । পদার্থবিজ্ঞান পদার্থ নিয়ে আলোচনা করে, রসায়ন মৌল/ যৌগ নিয়ে আলোচনা করে, জীব বিজ্ঞান প্রানি ও উদ্ভিদ নিয়ে আলোচনা করে । কিন্তু এ সকল কিছুই শুধুমাত্র পৃথিবীর উপাদান । কোন শাখাই সকল শাখাকে নিয়ে আলোচনা করেনি । কিন্তু শুধুমাত্র Geography’ই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে । Geography তে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীব বিজ্ঞান, গণিত , আবহাওয়া বিজ্ঞান, সমুদ্র বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, বনবিজ্ঞান, নদী তত্ত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, জল বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মানচিত্রাক্কন বিদ্যা ইত্যাদি সকল বিষয়ই পড়ানো হয়, যা আর কোথাও এক সংগে পড়ানো হয়না ।। তাই Geography পড়লে একই সাথে সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান কিংবা Social Science & Natural Science/Physical Science জানা যায় ।

প্রেক্ষাপট অনুযায়ী Geography এর মিল আছে Physics বা পদার্থ বিজ্ঞানের সাথে । ভূগোল প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের নিত্য নতুন শাখার জন্ম দিচ্ছে, যেমনঃ আবহাওয়া বিজ্ঞান, সমুদ্র বিজ্ঞান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান ,নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, জল বিজ্ঞান ইত্যাদি । ভূগোল পৃথিবীর সব থেকে পুরনো শাস্ত্রগুলোর একটি । গ্রামার না জানলে যেমন ভাষা শেখা যায়না , ঠিক তেমনি ভূগোল না জানলে পৃথিবীকে চেনা যায়না । পৃথিবীর অধিবাসী হিসেবে পৃথিবীকে জানা প্রত্যেকটি মানুষের মৌলিক দায়িত্ব । তাই প্রত্যেকটি মানুষের ভূগোলের জ্ঞান থাকা অত্ত্যান্ত জরুরী ।ভূগোল কাজ করে পুরো পৃথিবী নিয়ে । এর কাজের সূত্র তিনটিঃ ১] স্থান ২] কাল এবং ৩] পাত্র ।

এখানে স্থান , মানে পৃথিবীর কোন স্থান ! কাল মানে পৃথিবীর কোন সময় !! আর পাত্র মানে মানুষ !!! অর্থাৎ সময় // স্থান / মানুষ কে নিয়েই ভূগোলের মূল খেলা। এর সাথে থাকে Distance বা দূরত্ব …। দূরত্ব , স্থান কাল ও পাত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

তাহলে আমরা ভূগোল কিভাবে কাজ করে ? কিসের উপরে কাজ করে ? কেন কাজ করে ? ঐ কাজের ফলাফল কি ? এগুলো জানলাম । এখন একাডেমিক ভাবে ভূগোলের কার্যকরণ জানবো, আর ভূগোল পড়লে কি হবে আর না পড়লে কি হবে তা জানবো !! সেই সাথে জানবো ভূগোল গ্র্যাজুয়েট বা ভূগোলবিদদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে !! সারা পৃথিবীতে ভূগোল যেখানে যেখানে পড়ানো হয় তার মধ্যে সবথেকে সেরা জায়গাটি হলোঃ যুক্তরাজ্যের “অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়/ University of Oxford” সেখানে “স্কুল অব জিওগ্রাফি” সারা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ । আর পুরো এশিয়ার মধ্যে জিগ্রাফিতে সবথেকে বেশী এগিয়ে ভারত ও জাপান।

ভারতের এমনকোন সরকারী ভার্সিটি নেই যেখানে ভূগোল সাবজেক্ট টি নেই , প্রায় সকল ভারতীয় পাবলিক ভার্সিটিতেই ভূগোল সাবজেক্ট টি রয়েছে ভারতে।। ভূগোলকে ভারত এতো গুরুত্ব দেয় বিধায়, আজ ভারত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সব থেকে এগিয়ে আছে । ভারতের সবথেকে জনপ্রিয় ও প্রথম সারীর সাবজেক্ট ভূগোল । কোলকাতা, মাদ্রাজ, মুম্বাই, দিল্লি ও জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল সব থেকে এগিয়ে । আবার আমেরিকাতেও ভূগোলের জনপ্রিয়তা কম নয় । অ্যামেরিকান যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারীর সাবজেক্ট ও ভূগোল । সে দেশে ভূগোলবিদরা নানান গবেষণা ক্রিয়া কর্মে নিয়োজিত । নাসা এরকমই একটি সংস্থা, যা মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত কাজ করে থাকে । ঐ সংস্থায় বহু ভূগোলবিদ এবং পদার্থবিদ গবেষনায় নিয়োজিত আছেন । আমেরিকার নিউইয়র্কে ১৮৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া “The American Geographical Society” ও “Association of American Geographers/AAG” অ্যামেরিকায় ভূগোলবিদদের পাদস্থান ।

এরকম সোসাইটি ব্রিটেনেও আছে, যেমনঃ “The Institute of British Geographers ” ও “Royal Geographical Society” .. এরকম সংস্থা আমাদের বাংলাদেশেও আছেঃ “Bangladesh Geographical Society” ও “Bangladesh National Geographical Association” সে যাই হোক…পৃথিবীর সব সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল পড়ানো হয় । কয়েকটি উদাহরণ দেইঃ জার্মানির বার্লিন, বন, মিউনিখ, লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় ; ফ্রান্সের সবোর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় । ব্রিটেনের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় । অস্ট্রেলিয়ার সিডনী বিশ্ববিদ্যালয়, কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় । জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় । সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি । পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের নামকরা ইউনিভার্সিটিতে ভূগোল পড়ানো হয় ।

 

সারা পৃথিবীতে যতো ছেলে মেয়ে ভূগোলে পড়াশুনা করে তার অর্ধেকেরই কর্ম ও গবেষণার চাহিদা রয়েছে অ্যামেরিকায় । উন্নত দেশ অ্যামেরিকা, মহাকাশ ও পৃথিবী নিয়ে গবেষণা করে নিত্য নতুন বিষয় ও ঘটনাবলীর আবিষ্কার করছে । আমেরিকাতে একজন ভূগোলবিদের বেতন আকাশ ছোঁয়া । মহাকাশ বিজ্ঞান, জীব বৈচিত্র্য , পরিবেশ, সামরিক ক্ষেত্র এ সকল দিক থেকে অ্যামেরিকা পৃথিবীতে সবার উপরে রাজত্ব করে এর মুলে তাঁদের ভূগোল শিক্ষা ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ভূগোলবিদদের ডেকে নেওয়াই এর মূল কারন । মহাসাগর গুলোতে আমিরিকার রণতরী ডুবোজাহাজ ভেসে বেড়ায়, মহাকাশে অ্যামেরিকার স্যাটেলাইট প্রদক্ষিন করে তাঁদের ভূগোল শিক্ষার উৎকর্ষতার কারনেই । সামরিক কলা কৌশলেও অ্যামেরিকানরা ভূগোলের জ্ঞান ব্যবহার করে ।। তাই সারা পৃথিবী বিশেষত অ্যামেরিকায় ভূগোলবিদের চাহিদা ব্যাপক । আর সারা পৃথিবীর সেরা সেরা ইউনিভার্সিটিতে ভূগোলে পড়াশুনা করার অফুরান সুযোগ রয়েছে । রয়েছে পৃথিবীকে প্রাণ ভরে জানার । এতক্ষণ আমরা খুব সাধারণ ভাবে জানলামঃ ভূগোল ও উন্নতদেশ প্রেক্ষিত ;সারা পৃথিবীতে ভূগোলের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ।

অনেক কথা হলো এবার আমাদের প্রাণের দেশ “সোনার বাংলাদেশের” প্রসঙ্গে আসি । বাংলাদেশে আমরা জানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় । এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পূর্বে বাংলাদেশের সকল স্নাতক কলেজ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলো, যেমনঃ রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ, বরিশালের বি এম কলেজ, রাজশাহী কলেজ, জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা কলেজ ইত্যাদি । ঐ সময় এই কলেজ গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতো ভারতের “কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়” সে সময়ে । সে সময়ে এই অঞ্চলের ভূগোল শিক্ষার শেকড় ছিলো কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় । কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও ভূগোল পড়ানো হতো , আবার পুরনো কলেজ, যে গুলো বর্তমান বাংলাদেশে অবস্থিত ছিলো সেগুলোর অনেকগুলোতে ভূগোল সাবজেক্ট টি ছিলো । এর মধ্যে রাজশাহী কলেজ, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজের নাম উল্লেখ করা যায় । পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে এগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালে । সেটি ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম বাংলাদেশে ভূগোলের পাঠদান । এরপর ১৯৫৫ সালে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় । পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭০ সালে স্থাপিত হবার সময়ই প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগ হিসেবে ঐ বছরই জাহাঙ্গীরনগরে ভূগোলের যাত্রা শুরু হয় । বলা বাহুল্য তৎকালীন জগন্নাত্থ কলেজ বর্তমানে “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে” রুপ নেয়ায় সেখানেও ভূগোলের অবস্থান রয়ে যায় , কেননা কলেজ থাকাকালীনই সেখানে ভূগোল ছিলো । বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় “চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে” ভূগোল বিভাগ অনেক পরে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরেও ভূগোল চালু হয় । সিলেটের শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল বিভাগ স্থাপন করে । সর্বশেষ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল চালু করে ।

দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে একমাত্র Central Women’s University, Dhaka তে ভূগোল রয়েছে । ভূগোলকে কেন্দ্র করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ পৃথক একটি অনুষদ গড়ে তুলেছে । যা হলোঃ”Faculty of Earth & Environmental Sciences”; যেখানে ভূগোল বিভাগ ছাড়াও ভূগোলের আরও ৩ টি অঙ্গ বিভাগ রয়েছে ।। এগুলো হলোঃ সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগ; ভূতত্ত্ব বিভাগ ; দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ ।

তারমানে দেশের বড় ও প্রথম সারীর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সবকটিতে ভূগোল বিভাগ আছে । কেন আছে ?? এর প্রয়োজনীয়তার কথা মাথাই রেখেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহ এই বিভাগটি খুলেছে । এবার বলি, বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে একটা ভুল ধারণা আছে । সেটা হলো ভূগোল আর্টসের সাবজেক্ট ! এটা কিন্তু একটা গুজব । আসলে ভূগোল একটা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বা Natural Science. ভূগোলে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন , জীব বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, গণিত সকল বিষয়ই পড়ানো হয় । এবার বলুন, তাহলে এটা আর্টসের সাবজেক্ট হয় কিভাবে ? প্রথমে কিন্তু বলা হয়েছে “ভূগোল বিজ্ঞানের জননী” । কেন ? তাও বলা হয়েছে । তাহলে শিওর হয়ে নিন যে, ভূগোল একটি বিজ্ঞান ।। এটা আর্টস বা কলা নয় ।। আমাদের বাংলাদেশে ভূগোল বিষয়টি আর্টসের সাবজেক্ট হিসেবে গুজব ছড়ানোর একটা কারন আছে, সেটি হলো স্কুল বা মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এই ভূগোল সাবজেক্ট টি সাইন্স তো বটেই এমনকি আর্টস আবার কমার্স এর ছাত্র – ছাত্রীরাও নিতে পারে ।

আবার কমার্সে “বাণিজ্যিক ভূগোল” পড়ানো হয় । আর অর্থনীতিতে স্নাতক পড়তে গেলেও “অর্থনীতিক ভূগোল” পড়তে হয় । মূলত এই কারনে সবার মধ্যে এখনও একটা ভুল ধারণা প্রচলিত, যে ভূগোল আর্টস ! ভূগোল কিন্তু আর্টস না পিউর সাইন্স । দেখেন এই আর্টিকেলে আগে বলা হয়েছে, আবারো বলছি যে, ভূগোল একটি বিজ্ঞান যা মূলত প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এটা সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এর মধ্যে সেতু স্বরূপ । মানুষ,পরিবেশ,পৃথিবী এবং এর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক , কাঠামো , ক্রিয়া ইত্যাদি আলোচনা করাই এর কাজ । তাই কমার্সে “বাণিজ্যিক ভূগোল” পড়ানো হয়, অর্থনীতিতে “অর্থনৈতিক ভূগোল” পড়ানো হয় কেননা ভূগোল সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এর মধ্যে সেতু স্বরূপ।

এবার একটা সাধারণ উদাহরণ দিয়ে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার করি, আলোচনায় বল্লাম, অনেকে মনে করে ভূগোল আর্টস ! যা আসলে একটা ভ্রান্ত ধারণা । কেন মনে করে ভূগোল আর্টস ? ঐ যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে আর্টস ও কমার্সের ছাত্র ছাত্রীরা ভূগোল নেয় ।। যদি এটা সাইন্স হতো, তবে তারা তো এটা নিতে পারতোনা । কথায় যুক্তি আছে । কিন্তু ভূগোল কি সেটা বার বার বলেছি । এটাও বলেছি যে, ভূগোল বিজ্ঞান হওয়া সত্ত্বেও কেন আর্টস বা কমার্সের স্টুডেন্টরা মাধ্যমিক অথবা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এটা নিতে পারে । ঐ যে এটা “সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এর মধ্যে সেতু স্বরূপ।”

এখন ভূগোল ব্যাতিত অন্য আরও দুইটি শাস্ত্রের উদাহরণ দেই , যেগুলো বিজ্ঞান হবার পরেও ঐ মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ওইগুলোও আর্টস এবং কমার্সের স্টুডেন্টরা নিতে পারে । এইরকম দুইটি সাবজেক্টঃ ১] কৃষি শিক্ষা ও ২] কম্পিউটার শিক্ষা ! মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এই কম্পিউটার শিক্ষা ও কৃষি শিক্ষা আর্টস / কমার্স / সাইন্স সবাই নিতে পারে, তা আমরা সবাই জানি । কিন্তু এই কৃষিতে কিংবা কম্পিউটার বিজ্ঞানে অনার্স /মাস্টার্স করতে গেলে সেটা কিন্তু আর আর্টস কিংবা কমার্সের স্টুডেন্টরা করতে পারেনা কেননা ওইগুলো BSc(Honours) বা Bachelor of Science(Honours) ।

আর্টস বা কমার্সের কারো Science background না থাকার কারনে তারা কিন্তু মাধ্যমিক / উচ্চ মাধ্যমিকে ঐ বিষয় দুইটি অধ্যয়ন করতে পারলেও অনার্স মাস্টার্স করতে পারছেনা । কোন “কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়” কিংবা কোন “প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়” অথবা কোন “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” তাঁদের এই সুযোগ দেয়না । ঠিক তেমনই ভূগোল মাধমিক/উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সবাই নিতে পারলেও অনার্স পর্যায়ে ঐ কম্পিউটার বিজ্ঞান কিংবা কৃষির মতোই অর্থাৎ “BSc(Honours) বা Bachelor of Science(Honours)”।

উপরে বাংলাদেশের যতোগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বলেছি সেগুলোর কেউই ভূগোলে BA কিংবা BSS ডিগ্রি দেয়না । সবগুলোই BSc(Honours) ডিগ্রি দেয় ।এবার বুঝলেন তো ?? সাইন্স না হলে বাংলাদেশের এইসব বিশ্ববিদ্যালয় কেন ভূগোলে অনার্স পর্যায়ে BSc(Honours) ডিগ্রি ও মাস্টার্সে MSc ডিগ্রি দিতো ?? শুধু কি বাংলাদেশ ?
ঐ যে বলেছিলাম “অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের” কথা, যেটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভূগোল শিক্ষার পীঠস্থান ! ওইখানেও এটা সাইন্স ।। ওইখানেও ভূগোলে অনার্স পর্যায়ে BSc(Honours) ডিগ্রি ও মাস্টার্সে MSc ডিগ্রি দেয় ।

ভূগোল অনার্স পড়তে গেলে একজন ছাত্রকে বিজ্ঞানের সকল বিষয়াদির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হয় ।। এখানে প্র্যাকটিকেল করতে হয় , ল্যাব করতে হয় । যেমনঃ Environment Lab, Weather Lab, GIS(Geographic Info System) Lab, Hydro-logical Lab ! ফিল্ড ওয়ার্ক করতে হয় । প্রোজেক্ট করতে হয়, প্রেজেন্টেশন করতে হয়, রিসার্চ পেপার জমা দিতে হয় ! নিয়মিত Assignment Paper জমা দিতে হয় ।

আছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো অনেক Cartographic Drawing, Project Drawing, Settlement Drawing, Spatial Drawing প্রভৃতি বিষয়গুলো । এখন কি মনে হচ্ছে যে এটা সাইন্স ?? জি হ্যাঁ সাইন্স তো বটেই । শুধু সাইন্স নয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং , পদার্থ বিজ্ঞান, অঞ্চল পরিকল্পনা, আবহাওয়া গবেষণা, ভূতত্ত্ব, পানি সম্পদ উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়নের মতো জটিল জটিল বিষয়াদি এখানে সন্নিবেশিত আছে ।

এই গুলো কারনেই এই সাবজেক্টের চাহিদা অ্যামেরিকায় আকাশচুম্বী ! কারন অ্যামেরিকানরা পরিবেশ বা পৃথিবীকে অন্য কোন দেশের চেয়েও বেশী নিয়ন্ত্রণ করতে চায় । এতক্ষণ অনেক কিছুই যেনে ফেল্লাম ! এখন তাহলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন ভূগোল গ্র্যাজুয়েট এর ক্যারিয়ার সম্পর্কে বলা যাক, ভূগোলে পড়াশুনা শেষ করে আপনি বাংলাদেশে অনেক সরকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন,

একনজরে সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলো সম্পর্কে একটু ধারণা:

সরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহঃ
১] পানি উন্নয়ন বোর্ড
২] বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর
৩] বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর
৪] পরিবেশ অধিদপ্তর
৫] নদী গবেষণা ইন্সটিটিউট, ফরিদপুর
৬] বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থা
৭] Institute of Water Modelling (IWM)
৮] CEGIS- সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস
৯] খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
১০] খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো
১১] গণপূর্ত অধিদপ্তর
১২] ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)
১৩] চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
১৪] জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ
১৫] জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
১৬] জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি (এনএপিডি)
১৭] রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
১৮] রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
১৯] দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর
২০] নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর
২১] পরিকল্পনা কমিশন
২২] পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) বগুড়া
২৩] পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)
২৪] পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন
২৫] পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো)
২৬] বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড)
২৭] বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র
২৮] বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান
২৯] বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর
৩০] বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট
৩১] বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ কর্পোরেশন
৩২] বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
৩৩] বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন
৩৪] বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড)
৩৫] বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড
৩৬] বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইন্সটিটিউট
৩৭] বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ
৩৮] বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ
৩৯] বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ
৪০] বাংলাদেশ হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড
৪১] ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর
৪২] ভূমি সংস্কার বোর্ড
৪৩] মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট
৪৪] যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশ
৪৫] সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর
৪৬] সমাজসেবা অধিদফতর
৪৭] বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড
৪৮] বাংলাদেশ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ…………… ইত্যাদি ।। এই রকম আরও সরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ভূগোল গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ।।

একনজরে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলো সম্পর্কে একটু ধারণা:

বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহঃ
1] Water Aid Bangladesh
2] UNDP Bangladesh
3] Unicef
4] Save the Children
5] CARE
6] Concern Worldwide
7] IUCN
৮] পবা
৯] বাপা
10] BRAC
11] RDRS এরকম অনেক বিদেশী-দেশী এনজিও ও উন্নয়ন সংস্থায় ভূগোল গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাপক চাহিদা আছে ।

এছাড়াও ভূগোল গ্র্যাজুয়েটরা নিজে Entrepreneur হয়েও আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে পারে । উপরোক্ত স্থানগুলো ছাড়াও ভূগোল গ্র্যাজুয়েটরা ব্যাংকিং সেক্টরেও যাচ্ছে, রাখছে তাঁদের মেধার অবদান । এরকম অজস্র উদাহরণ আছে । এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভূগোল গ্র্যাজুয়েটরা অগ্রাধিকার পায় ।

চাকরীর বাজারে সবার তীব্র আগ্রহের জায়গাটার নাম “বিসিএস/ BCS ” ! যে কোন সাধারণ ক্যাডারে ভূগোল গ্র্যাজুয়েটরা আবেদন করতে পারবে যেমনঃ বিসিএস পুলিশ, বিসিএস প্রশাসন ইত্যাদি।। এছাড়া বিসিএস টেকনিক্যাল ক্যাডারে ভূগোল গ্র্যাজুয়েটদের জন্যই রয়েছে “বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার (ভূগোল)” তাহলে বিসিএসেও ভূগোল গ্র্যাজুয়েটদের সুযোগ অবারিত । আরও একটি মজার ব্যাপার হলো বিসিএস এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের মধ্যে ভূগোলের উপরেই ১০ নম্বরের একটি সাবজেক্ট আছে ।। যার নামঃ “ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা”……।

এছাড়াও প্রিলিমানারি পরীক্ষার “বাংলাদেশ বিষয়াদি – ৩০ নম্বর” ও “আন্তর্জাতিক বিষয়াদি – ২০ নম্বর” ও অনেক সহজ হয়ে যায় ।। অর্থাৎ বিসিএস প্রিলি পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের মধ্যে ৬০ নম্বর ভূগোল গ্র্যাজুয়েটদের এমনিতেই কমন থাকে ।

এরপর আসা যাক বিসিএস লিখিত পরীক্ষায়, বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় মোট নম্বর থাকে ৯০০ নম্বর এর মধ্যে “বাংলাদেশ বিষয়াদি – ২০০ নম্বর” এবং “আন্তর্জাতিক বিষয়াদি – ১০০ নম্বর” মোট ৩০০ নম্বর বেশীরভাগ সময় কমনই থাকে । এছাড়া সাধারণ বিজ্ঞানে ১০০ নম্বরে ৩ টি পার্ট রয়েছে এই পার্টগুলো হলোঃ

  • ক) সাধারণ বিজ্ঞান – ৬০ নম্বর খ) কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি – ২৫ নম্বর গ) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স – ১৫ অর্থাৎ ক+খ+গ= ১০০ নম্বর । এখানে “ক- সাধারণ বিজ্ঞান ৬০ নম্বরে”… মোট ১১ টি অধ্যায় আছে ।।
    তাঁতে পদার্থ বিজ্ঞানের ৩ টি, যথাঃ Light, Sound, Magnetism !
    রসায়নের ২ টি, যথাঃ Acid -Base- Salt এবং Polymer !!
    ভূগোলের ৩ টি যথাঃ Water, Our Resources এবং Atmosphere !!!
    আর জীব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ৩ টি যথাঃ Food & Nutrition , Biotechnology এবং Disease & Health Care

তাহলে ভূগোল গ্র্যাজুয়েট দের পক্ষে বিসিএস পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা অনেক সহজ ।। আর ইতিমধ্যে বহু ভূগোল গ্র্যাজুয়েট বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মরত আছেন ।

কারো ভালো ফলাফল থাকলে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বিভাগের শিক্ষক হিসেবেও ভূগোল গ্র্যাজুয়েটরা নিয়োগপ্রাপ্ত হয় ! এবং ওনারা সরকারী অনেক প্রজেক্টের কাজে ও রিসার্চের কাজেও নিয়োজিত থাকেন ।
এছাড়া আজ অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে “পরিবেশ বিজ্ঞান” সাবজেক্ট খুলেছে । এরকম কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হলোঃ North South University; Independent University Bangladesh; Stamford University; Daffodil International University, Dhaka ; Uttara University এগুলোর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারে । আরও পারে BRAC University এর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে ।

তাছাড়া সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমনঃ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় , নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ও পটুয়াখালীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের “দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ” এইগুলোতেও পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়টি থাকাতে এইগুলোতেও ভূগোল গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাপক চাহিদা আছে ।। আরও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেগুলোতে “ভূগোল ও পরিবেশ” অথবা “পরিবেশ বিজ্ঞান” বিষয়টি খুলতে যাচ্ছে …!
আর আছেই তো দেশের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি কলেজ যেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আর ডিগ্রি কলেজ গুলোতে ভূগোলের শিক্ষক নেয়া হয় সেগুলোতে নিয়োগ পেতে “শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা” গুলোতে উত্তীর্ণ হতে হয় ।

এইগুলো কেবল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বল্লাম  এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, বাংলাদেশে ভূগোলে অনার্স করে কেউ বিদেশে যেতে চাইলে সে কি করবে ? সেক্ষেত্রে তো সুযোগ আরো অনেক বেশী ।। আগেই বলেছিলাম ইউরোপ আর অ্যামেরিকাতে ভূগোলের চাহিদা আকাশ চুম্বী । প্রথমে ভূগোলে অনার্স করার পর GRE অর্থাৎ Graduate Record Examination পরীক্ষা দিতে হবে । এটা সরাসরি অ্যামেরিকা থেকে অনলাইনে গ্রহন করা হয় ।। এই পরীক্ষায় ৩১০+ নম্বর থাকলে, অ্যামেরিকার ভালো ভালো ভার্সিটিতে মাস্টার্স ও পিএইচডি এর জন্য আবেদন করা যাবে অনলাইনের মাধ্যমেই ।। সাথে লাগবে TOEFL কিংবা IELTS পরীক্ষার ভালো নম্বর অর্থাৎ IELTS হলে ৭+ ।। সব কমপ্লিট হয়েগেলে অ্যামেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ RA/TA Research /Teaching Assistant হিসেবে ফেলোশিপ / স্কলারশিপ দেবে ।। এরকমই অ্যামেরিকার একেবারে প্রথম সারীর একটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো “Yale University” ….

যেখানে প্রতি বছর ভূগোল ও ভূগোলের বিভিন্ন অঙ্গ বিষয়াদি সম্পর্কে পড়াশুনা করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অ্যামেরিকাতে পাড়ি জমায় !! অ্যামেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্র বিভিন্ন স্কলারশিপ দেয় ।। এরকম ৩ টি স্কলারশিপ হলোঃ ১] Erasmus Mounds ২] ইংল্যান্ডের Commonwealth Scholarship ও ৩] জার্মানির DAAD….

এইগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রের স্টুডেন্টদের জন্য দেয়া হলেও ভূগোল গ্র্যাজুয়েটদের জন্য এইগুলোতে সুযোগ অনেক অনেক বেশী । কারন ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও ভূগোল সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বেশী । অতএব দেশ এবং বিদেশ কোথাওই ভূগোলের গুরুত্ব কম নয় । বিদেশে আরও উচ্চ শিক্ষা নিয়ে একজন ভূগোলবিদ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থা সমূহ, উন্নয়ন সংস্থা সমূহতে লাখ লাখ টাকা বেতনে গবেষক বা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত হতে পারে । হতে পারেন জ্যোতির্বিদ কিংবা মহাকাশ বিজ্ঞানী, চাকরী পেতে পারেন নাসাতেও ! পেতে পারেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিবেশ পদক, যা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারে । আর বর্তমানে “Climate Change” এর উপরে সারা পৃথিবীতে চাকরীর বাজার খুব চড়া !

এতক্ষণ অনেক কিছু বলে ফেল্লাম, শুধু প্রতিষ্ঠিত হওয়া নয়, ভূগোলের জ্ঞান ছাড়া মানুষ পৃথিবী সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে ।। তাই সকলেরই ভূগোলের প্রাথমিক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী । ভূগোলের জ্ঞান থাকলে মানুষ , পৃথিবীকে সঠিকভাবে জানবে, পরিবেশ সচেতন হবে । পরিবেশের ক্ষতি করবে না । দুর্যোগ সম্পর্কে জানবে ।ভূমিকম্প, বন্যা, বজ্রপাত ইত্যাদি কেন হয়, কখন হতে পারে, হলে কি করতে হবে এগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা জন্মাবে, যা প্রতিটি মানুষের জানা দরকার ।

মানুষ জানবে পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে । পরিবেশের ক্ষতি করবে না । গাছ লাগাবে ।। জানবে জীব বৈচিত্র্য । মানুষ হবে পরিবেশের বন্ধু । আর পরিবেশও হবে মানুষ সহায়ক । তাই সত্যি সত্যি মাতৃভাষার মতো করে প্রত্যেককে ভূগোলও শেখা উচিৎ ।। কারন পুরো পৃথিবী আমাদের মায়ের মতো । যা এই পৃথিবীর সকল জ্ঞানের মূল উৎস !

সাগর, মহাসাগর, পাহাড়, পর্বত, মেঘমালা… সবই জানা দরকার । জানা দরকার দিন- রাত্রির কারন, সময়, গ্রহ, নক্ষত্র, পৃথিবীর উৎপত্তি সম্পর্কে । একটা মজার তথ্য দেইঃ এখন পৃথিবীতে ৭ টি মহাদেশ রয়েছে ।। একসময় ছিলো একটি ।পৃথিবীর সূচনার কয়েক হাজার বছরের মধ্যেই দেখা যায়, পুরো পৃথিবীর মাঝ কেন্দ্রে ঐ একটি মহাদেশ ছিলো ।। আর মহাসাগর ছিলোও একটি । ঐ মহাদেশটির চারপাশ বেষ্টন করে ছিলো ঐ মহাসাগরটি ।। কালক্রমে ঐ একটি বৃহৎ মহাদেশ ভেঙ্গে এখনকার ৭ টি মহাদেশ সৃষ্টি হয়েছে, আর একটি আরেকটি থেকে ক্রমেই দূরে সরে গেছে । মহাসাগরটি আগের মতোই আছে, কিন্তু বিচ্ছিন্ন মহাদেশ গুলোর কারনে ঐ একটি মহাসাগর সুবিধার্থে ৫ টি গণ্য করা হয়, কিন্তু সব গুলোই একটি আরেকটির সাথে সংযুক্ত আছে ।

 

আর মহাদেশটি ভেঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে ৭ টির আকারে পৃথিবীর সকল পাশে ছড়িয়ে যায় । এর ফলেই কিন্তু পৃথিবীর একেক প্রান্তে দিন হলে অন্য প্রান্তে রাত হয় । অথচ যখন ভূখণ্ড একটিই ছিলো তখন তার সকল দিকেই একি সংগে দিন আর একি সংগে রাত হতো, কালক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ভূখণ্ড বিচ্ছুরিত হওয়ায় আলাদা আলাদা সময়ে দিন-রাত্রি হয় ।। এই কথা গুলোই হয়তো অনেকের জানা ছিলো না । ভূগোল জানলে এসব রহস্য জানা যায় ।

পরিশেষে আর অল্প কিছু কথা বলে আলোচনা শেষ পথে নিয়ে যাচ্ছিঃ

আমরা অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তি কে চিনি যাদের অন্যান্য পরিচয় আমরা জানলেও তাঁদের ভূগোলবিদ পরিচয় আমরা অনেকেই জানিনা, যেমনঃ টলেমী (টলেমী কে জ্যোতির্বিদ হিসেবে আমরা চিনি কিন্তু উনি মূলত ভূগোলবিদ ছিলেন); ইবনে সিনা (ইবনে সিনাকে আমরা পরিব্রাজক ও চিকিৎসক হিসেবে চিনি কিন্তু তিনিও আসলে ভূগোলবিদ ছিলেন) এরকম অনেক ভূগোলবিদ মহামনিষী আছেন, যারা স্বপরিচয়ে পরিচিত ।

বাংলাদেশের দুজন এরকম মানুষের কথা বলিঃ

চ্যানেল আই এর “শাইখ সিরাজ” ; হুমায়ূন আহমেদের সর্বকনিষ্ঠ ভাই “কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব” !! ভূগোলের মূল দুইটি শাখা নিয়ে সামান্য আলোচনা করে, এই আর্টিকেল একেবারে শেষ করছিঃ

ভূগোলকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ
১] Physical Geography বা প্রাকৃতিক ভূগোল ও ২] Social Geography বা সামাজিক ভূগোল !!
ফিজিক্যাল জিওগ্রাফী মূলত ভূগোলের বিজ্ঞান অংশ ।। এখানে পড়ানো হয়ঃ ভূতত্ত্ব ; জল বিজ্ঞান; নদী বিজ্ঞান; সমুদ্র বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান , আবহাওয়া বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, পদার্থ, রসায়ন, জীব ভূগোল, গাণিতিক ভূগোল, পারিসংখ্যানিক ভূগোল ইত্যাদি বিজ্ঞান বিষয়াদি ।।

আর সোশ্যাল জিওগ্রাফীতে পড়ানো হয়ঃ সামাজিক ভূগোল, অর্থনীতিক ভূগোল, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনার মতো বিষয়াদি ।।
অর্থাৎ শুধুমাত্র ভূগোলেই একসাথে বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়াদি একত্রে জানা যায় ।। তবুও ভূগোল, ফিজিক্যাল জিওগ্রাফী অংশের উপরেই বেশী গুরুত্বদেয় ।।
Physical Geography তে পুরো পৃথিবীকে ৪ টি মণ্ডলে ভাগ করা হয়ঃ
a] Lithosphere
b] Hydrosphere
c] Atmosphere
d] Biosphere…এই ৪ টি মণ্ডল নিয়েই আমাদের প্রাণ প্রিয় এই পৃথিবী !!
(অশ্ব মণ্ডল +জল মণ্ডল +বায়ু মণ্ডল +জীব মণ্ডল = পৃথিবী)
আসুন এই চার মণ্ডল কে জানি, পৃথিবীকে জানি…
আসুন ভূগোল পড়ি ভূগোল জানি… !!

– সম্পাদনায়
কাব্য
শেষ বর্ষ (সম্মান )
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ
জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

About Nazmul Hasan

Hi! I'm Nazmul Hasan. From Koyra, Khulna. I'm Student of Under National University of Govt. B. L. College, Khulna, Department of Political Science....

Check Also

গণিত কেন পড়ব - গণিত নিয়ে কিছু কথা

গণিত কেন পড়ব – গণিত নিয়ে কিছু কথা

গণিত কেন পড়ব – গণিত নিয়ে কিছু কথা। স্কুল জীবনে সবাই মোটামুটি একটি কমন রচনা …