৪৬ তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার্থীদের জন্য শেষ সময়ে করণীয় শীর্ষক পরামর্শ/অভিজ্ঞতা/টিপস্ শেয়ার। ক্যাডার হওয়ার ম্যারাথন রেইসে সবচেয়ে ক্রুশাল পার্ট হলো প্রিলিমিনারি। প্রায় ৩ লাখ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৫ হাজার (+/-) লিখিত পরীক্ষার সুযোগ পাবে। অর্থাৎ মাত্র ২০০ নম্বরের ২ ঘন্টার একটি পরীক্ষায় একই
দিনে ২ লাখ ৮৫ হাজার জন স্বপ্নবাজের স্বপ্নভঙ্গ হতে যাচ্ছে।
আগামী ৯ মার্চ (শনিবার) এই মহাগুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পরীক্ষার বাকি আছে মাত্র ৫০ দিন। সারাবছর অথবা বিগত কয়েক বছর ধরে অনেক কিছুই তো পড়েছেন। এখন এই সময়গুলোতে খুবই টেকনিক্যালি পড়তে হবে। হেলেদুলে পড়লে নিশ্চিতভাবেই ঝরে যাবেন। তাই আমার প্রথম বিসিএস ৪৩ তম থেকে সর্বশেষ ৪৫ তম বিসিএস পর্যন্ত টানা ৩টা প্রিলিমিনারি পাশ করার পেছনে যে কৌশল কাজে দিয়েছে তা আপনাদের উদ্দেশ্যে শেয়ার করছি। অনেকেই হয়ত আমার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ, তাদের কৌশল ভিন্ন হতে পারে; অনেকে আমার সাথে দ্বিমতও পোষণ করতে পারেন।
এই ৫০ দিনে যা পড়বেন/করবেনঃ
১. আজই একটা রুটিন তৈরি করুন। প্রতিটা সাবজেক্টের জন্য ৪/৫ দিন করে রিভিশনের সময় নির্ধারণ করুন।
২. যে বই এতদিন পড়ে এসেছেন, কেবল সেগুলোই পড়ুন। পুরো বই পড়তে সময় লাগবে, তাই বইয়ের ভেতরের মার্ক করা অংশগুলোতে চোখ বুলান, প্রতিটা টপিক/চ্যাপ্টারের শেষের প্রিভিয়াস প্রশ্নগুলোয় জোর দিন। সেখান থেকে রিপিট আসলে যেন ভুল না হয়।
৩. এতদিন ধরে পড়ে এসেছেন, পরীক্ষা দিয়েছেন। নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কোন কোন টপিকগুলো বেশি কমন, এবারের জন্য বেশি ইম্পরট্যান্ট। সেগুলোতে এক্সট্রা নজর দিন।
৪. একটা অনলাইন/অফলাইন কোচিংয়ে মডেল টেস্ট ব্যাচে ভর্তি হয়ে রেগুলার পরীক্ষা দিন।
৫. ফোনে কাউন্টডাউন এপ ইনস্টল করে স্ক্রিনে রাখুন। আর কত দিন, কত ঘন্টা কত মিনিট বাকি দেখে পড়াশোনার জোর বাড়ান।
৬. Ultimate Job Solutions, Live MCQ, BCS Prostuti এই তিনটা এপ ফোনে ইনস্টল করুন। হাঁটতে, বসতে,চড়তে,অবসরে টপিক ধরে ধরে অথবা মিক্স করে বিভিন্ন সাবজেক্টের উপর পরীক্ষা দিন। সেখানে অনেক গোছানো ইনফো থাকে। নিয়মিত চোখ বুলাবেন।
৭. এখন থেকে দৈনিক মিনিমাম ১৪ ঘন্টা পড়ুন। সেটা হোক বই/নোট/ফোন যেখান থেকে ইচ্ছা। পড়ার মধ্যেই থাকুন।
যা পড়বেন/করবেন না
১. সাম্প্রতিক প্রশ্ন/পেপার/কারেন্ট এফেয়ার্স/জিকে ভিউ/ রিসেন্ট ভিউ ইত্যাদি পড়ে সময় নষ্ট করবেন না। প্রিলির প্রশ্ন ডিসেম্বরেই রেডি হয়ে গেছে। তাই এখন সাম্প্রতিক পড়ে কোন লাভ নেই। তাছাড়া ৩৮-৪৫ তম বিসিএসে তেমন কোন সাম্প্রতিক প্রশ্ন আসে নাই। আর যদি ২/৩টা আসেও, তা হয় আপনি এমনিতেই পারবেন, অথবা ১ মাস ধরে পড়লেও ভুল দাগিয়ে আসবেন। এগুলো আনপ্রেডিক্টেবল। তাই দুশ্চিন্তা/লোভ না করে বাদ দিন, সময়টা অন্য পড়ায় দিন।
২. গ্র্যামার ও গণিতে যেই টপিক/চ্যাপ্টার সবচেয়ে কঠিন লাগে, সেটা স্কিপ করুন। ১ নম্বরের জন্য ১ সপ্তাহ সময় নষ্ট করে অন্যদিকে ১০ নম্বর হারানোর কোন মানে হয় না।
৩. বই কিনে ঘরে বসে সর্বোচ্চ ১০টির বেশি মডেল টেস্ট দিবেন না। কৌশল অবলম্বন করুন। একেকদিন একেকভাবে পরীক্ষা দিন। একদিন ১৯০+ দাগাবেন, কত পাচ্ছেন দেখবেন। অন্যদিন কনফিউশন বাদে জানাগুলোই দাগাবেন, কত পাচ্ছেন দেখবেন। তাহলে বুঝতে পারবেন কয়টা দাগানো আপনার জন্য নিরাপদ। তবে আমি সবসময়ই ১৮০+ দাগাতাম।
৪. নতুন বই কিনবেন না অথবা নতুন কিছু পড়তে যাবেন না। এতদিন যা পড়েছেন, তার মধ্যে থেকে আসলে যেন ভুল না হয়, সেভাবে পড়ুন।
৫. খুব বেশি সমস্যা না হলে সামনের দুই মাস টিউশন থেকে ছুটি নেন। আমিও নিয়েছিলাম।
উপরের নির্দেশনা/পরামর্শসমূহ একান্তই আমার ব্যক্তিগত। ভালো লাগলে ফলো করবেন নাহয় ইগনোর করবেন। সবার জন্য অনেক বেশি শুভকামনা রইলো। আমার জন্য দোয়া করবেন।
সালাহ্ উদ্দিন কাদের
সহকারী পুলিশ সুপার-এএসপি
৪৩ তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত।