প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাইবা। যারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের জন্য রইল প্রাণঢালা অভিনন্দন ও ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা। আপনারা ইতোমধ্যে চাকরি নামক সোনার হরিণের দ্বিতীয় ধাপ অতিক্রম করে ফেলেছেন। সামনে ভাইবা নামক জুজো পার হতে পারলেই পেয়ে যাবেন সেই কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরি করেছি বলেই এবং গ্রুপে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম বলেই অনেকে “ভাইবা কি রকম হতে পারে” এই সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আসলে ভাইবার সম্পর্কে অনুমান করাটা খুবই দূরহ একটা কাজ। ভাইবা বোর্ডে কি জিজ্ঞেস করা হবে, কোন কোন টপিক থেকে জিজ্ঞেস করা হবে এগুলো সম্পূর্ণই নির্ভর করে বোর্ড মেম্বারদের উপর। ভাইভাতে বোর্ড মেম্বাররা যে কোন কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারে। এটা সম্পূর্ণ তাদের এখতিয়ার। ফিজিক্স এর ছেলেকে একাউন্টিং, একাউন্টিং এর ছেলেকে এনথ্রোপলজিও জিজ্ঞেস করতে পারে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আমি মোট ২ বার ভাইবা দিয়েছি। প্রথমবার চাকরি হয়নি। দ্বিতীয়বার চাকরি হয়েছিল। আমার সেই ভাইবা অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের সাথে কিছু টপিক শেয়ার করছি।
১. ভাইবা হবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, গণভবন কমপ্লেক্স এ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের পাশেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ভুল করেও কেউ ভাববেন না প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সচিবালয়ের ভিতরে। এটা মিরপুর রোডে।
২. ভাইবা বোর্ডে সাধারণত ১০/১২ জন মেম্বার থাকে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বোর্ডে থাকেন।
৩. আমাকে দুইবারই বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার নাম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগ সম্পর্কে প্রশ্ন, নিজের সাবজেক্ট একাউন্টিং (খুবই কমন ২/৩ টা প্রশ্ন) থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
৪. দ্বিতীয়বার ভাইবা দেওয়ার সময় আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার (জেনারেল) পদে কর্মরত ছিলাম। আমি সেই এনওসি ভাইবার সময় জমা দিয়েছিলাম। সেজন্য আমাকে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কেও কি কি যেন জিজ্ঞেস করছিল। এখন ঠিক মনে নেই।
৫. আর ভাইভাতে কিছু কমন বিষয় তো থাকেই। যেমন Introduce Yourself. খুবই কমন এবং প্রথম প্রশ্ন। ভাইবা জড়তা কাটানোর জন্য এই প্রশ্ন সবাইকে জিজ্ঞেস করে। স্যাররা ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে অবশ্যই ইংরেজিতে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন।
৬. বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে না জেনে ভাইবা বোর্ডে যাওয়াটা একটা ধৃষ্টতা। যারা বিসিএস এর রিটেন বা ভাইবা দিয়েছেন বা দিবেন তাদের এই বিষয়ে একটা ভালো ধারণা অবশ্যই আছে।
৭. সমসাময়িক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়। প্রতিদিন মোটামুটি পত্রিকা পড়েই এই বিষয়ে প্রিপারেশন নিতে পারবেন।
৮. গোয়েন্দা রিলেটেড বিভিন্ন টার্ম। উইকিপিডিয়া, গুগল ও ইউটিউব এর সাহায্য নিতে পারেন। যেহেতু প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরে ভাইবা দিবেন এবং এই বিষয়ে ইন্টারনেটে খুব বেশি কিছু নেই তাই যা যা আছে মোটামুটি সবই পড়বেন। আর এই সংস্থার প্রথম এবং বর্তমান মহাপরিচালকের নাম, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিবের নাম, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর নাম (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) জেনে যাবেন।
ভাইবার নির্দিষ্ট কোন সিলেবাস নেই। এই চাকরির ভাইবাতে কত মার্কস সেটা কোথাও প্রকাশ করা হয় না। তাই মোটামুটি কমন বিষয়গুলোতে একটা প্রিপারেশন নিয়ে যাবেন। বাকিটা সৃষ্টিকর্তা হাতে।
ভাইবা সম্পর্কে আমার একটাই পরামর্শ যদি নিজের নার্ভকে কন্ট্রোল করতে পারেন তাহলে অবশ্যই ভাইবা বোর্ডে ভালো করবেন। প্রশ্নের উত্তর পারা বা না পারার উপর কখনোই চাকরি নির্ভর করে না। চাকরি নির্ভর করে আপনি কতটা ভয় ডরহীন ভাইবা দিতে পারেন তার উপর।
সবার জন্য অগ্রিম শুভকামনা।
তারেক রহমান
সাবেক সহকারী পরিচালক
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর।
(১৮ আগস্ট ২০২০ থেকে ০৩ ডিসেম্বর ২০২২)
বর্তমানে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বাগেরহাটে কর্মরত।