পাবলিক পরীক্ষা থাকছে না জিপিএ ৫

পাবলিক পরীক্ষা থাকছে না জিপিএ ৫ ফল সিজিপিএ ৪-এ। পাবলিক পরীক্ষায় থাকছে না জিপিএ ৫। অর্থাৎ জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় আর জিপিএ ৫ পাওয়ার সুযোগ থাকছে না।
আগামী জেএসসি পরীক্ষা থেকেই কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ—সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ফল প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গতকাল বুধবার আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বৈঠকে তিনি সিজিপিএ পুনর্বিন্যাস করে একটি খসড়া উপস্থাপনের নির্দেশ দেন।
আন্ত শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আন্ত বোর্ডের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে সিজিপিএ ৫-এর পরিবর্তে ৪-এর মধ্যে ফল প্রকাশে সবাই একমত হয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বৈঠক করব। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ফল পর্যালোচনা করব। এরপর আগামী এক মাসের মধ্যে সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে কিভাবে ফল দেওয়া যায় সে ব্যাপারে একটি খসড়া শিক্ষামন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করব। যদি সম্ভব হয় তাহলে চলতি বছরের জেএসসি থেকেই আমরা সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ফল প্রকাশ করতে চাই। ’
বর্তমানে দেশে পাবলিক পরীক্ষায় সিজিপিএ ৫-এর মধ্যে ফল প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ফল প্রকাশ করা হয়। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশে সব ধরনের ফলই প্রকাশ করা হয় সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে। ফলে এসএসসি আর এইচএসসির ফলের সঙ্গে উচ্চতর শিক্ষার ফলের সমন্বয় করতে গিয়ে দেশের চাকরিদাতারাই মহাসমস্যায় পড়েন।
আর বিদেশে পড়ালেখা ও চাকরির ক্ষেত্রে পড়তে হয় আরো বড় সমস্যায়। কারণ প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে যাচ্ছে। তাদের এসএসসি ও এইচএসসি সার্টিফিকেটের সমতা করে তারপর বিদেশে যেতে হয়। এতে অনেক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আর আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের ফলাফলের সমতা থাকছে না।
এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ জন্য সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি ৪-এর লক্ষ্য অর্জনে সব পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আর এই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করতে একই ধরনের গ্রেডে ফল প্রকাশ করা দরকার। সব মিলিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই গ্রেড পরিবর্তন করছে বলে জানা যায়।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতি চালু হয়। সেখানে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৫, লেটার গ্রেড এ প্লাস। এটাই সর্বোচ্চ গ্রেড। এরপর ৭০ থেকে ৭৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৪, লেটার গ্রেড এ। ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৩.৫০, লেটার গ্রেড এ মাইনাস। ৫০ থেকে ৫৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৩, লেটার গ্রেড বি। ৪০ থেকে ৪৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ২, লেটার গ্রেড সি। ৩৩ থেকে ৩৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট এক, লেটার গ্রেড ডি। আর শূন্য থেকে ৩২ পাওয়া শিক্ষার্থীদের গ্রেড পয়েন্ট জিরো, লেটার গ্রেড এফ। জিপিএ ১ অর্জন করলেই তাকে উত্তীর্ণ হিসেবে ধরা হয়। কোনো বিষয়ে এফ গ্রেড না পেলে চতুর্থ বিষয় বাদে সব বিষয়ের প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্টকে গড় করেই একজন শিক্ষার্থীর লেটার গ্রেড নির্ণয় করা হয়। তবে সব বিষয়েই ৮০-র ওপরে নম্বর পাওয়া ফলকে অভিভাবকরা গোল্ডেন জিপিএ ৫ বলে থাকেন। কিন্তু শিক্ষা বোর্ডগুলোর ফল নির্ধারণ পদ্ধতিতে গোল্ডেন জিপিএ নামে কোনো গ্রেড নেই।
বর্তমানে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গড়ে সব বিষয়ে ৮০-এর ওপরে নম্বর পেলে সিজিপিএ ৪ ও লেটার গ্রেড হয় ‘এ প্লাস’। এরপর ৭৫ থেকে ৮০-এর মধ্যে সিজিপিএ ৩.৭৫ ও লেটার গ্রেড ‘এ’; ৭০ থেকে ৭৫-এর মধ্যে গ্রেড পয়েন্ট ৩.৫০ ও লেটার গ্রেড ‘এ মাইনাস’; ৬৫ থেকে ৭০-এর মধ্যে পয়েন্ট ৩.২৫ ও লেটার গ্রেড ‘বি প্লাস’; ৬০ থেকে ৬৫-এর মধ্যে পয়েন্ট ৩ ও লেটার গ্রেড ‘বি’; ৫৫ থেকে ৬০-এর মধ্যে পয়েন্ট ২.৭৫ ও লেটার গ্রেড ‘বি মাইনাস’; ৫০ থেকে ৫৫-এর মধ্যে পয়েন্ট ২.৫০ ও লেটার গ্রেড ‘সি প্লাস’; ৪৫ থেকে ৫০-এর মধ্যে পয়েন্ট ২.২৫ ও লেটার গ্রেড ‘সি’; ৪০ থেকে ৪৫ নম্বর পেলে পয়েন্ট ২ ও লেটার গ্রেড ‘ডি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর ৪০-এর কম নম্বর পেলে ফেল, এর লেটার গ্রেড ‘এফ’, এতে কোনো গ্রেড পয়েন্ট নেই।

About Nazmul Hasan

Hi! I'm Nazmul Hasan. From Koyra, Khulna. I'm Student of Under National University of Govt. B. L. College, Khulna, Department of Political Science....

Check Also

পরিবহন সংকট সমাধানের দাবিতে ঢাকা কলেজে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল

ঢাকা কলেজে পরিবহন সংকট সমাধানের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুধবার …