আগে ছাত্র ছাত্রীদের দেশে ফিরে আসার জন্য বলতাম, এখন আর বলি না – প্রফেসর ড: মোহাম্মদ আলী

বুয়েটের স্বনামধন্য প্রফেসর ড: মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মৃত্যুর কিছুদিন আগে বলেছিলেন, “আগে ছাত্র ছাত্রীদের দেশে ফিরে আসার জন্য বলতাম, এখন আর বলি না। দেশের অবস্থা ভাল না, আপনারা বিদেশেই থাকেন।” অধ্যাপক চৌধুরী ক্লাসে কখনোই হাজিরা নিতেন না; তবুও তাঁর ক্লাসে সব সময় থাকত উপচে পড়া ভিড়। এই একটি বিষয়ই বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে তাঁর পরিচিতি দেয়।
সাবেক সচিব ও অধ্যাপক এম ফাওজুল কবির খান এক স্থানে বলেছেন, “আমরা মন্ত্রণালয়ে একটি নাগরিক পরামর্শক কমিটি করি, যাতে অন্যান্য সুধীর সঙ্গে প্রফেসর মোহাম্মদ আলীকেও অন্তর্ভুক্ত করি। কমিটির প্রথম সভায় মোহাম্মদ আলী কীভাবে আসবেন ভেবে সচিবের গাড়িটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে পাঠাই। চালক ফিরে এসে জানান, প্রফেসর সাহেব তাঁকে বলেছেন চলে যেতে। মোহাম্মদ আলী হেঁটে সময়মতো সভায় হাজির হন।” – অথচ, আজকালকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত ফায়দা লুটতে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিতেই সিংহভাগ সময় কাটান।
অসুস্থ থাকাকালে প্রাক্তন ছাত্রদের কয়েকজন তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে যেতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘যা চিকিৎসা ঢাকাতেই হবে এবং আমার নিজস্ব সঞ্চয় থেকেই হবে। দেশের বাইরে বা অন্যের টাকায় চিকিৎসা হবে না।’ তিন বছর আগে এই মহানুভব আমাদের ছেড়ে চলে যান।
এমন মানুষ লাখে একজনও দেখা যায় না। তিনি জান্নাতবাসী হউন।
© ML Gani

অনেকে মন্তব্য করেছেনঃ

Md Arifur Rahmahn
২০০৫ সালে আমরা যখন বুয়েটে ভর্তি হই, স্যার তখন ছিলেন ভর্তি কমিটির সভাপতির দায়িত্বে। আর OAB তে আমাদের বিভাগ নির্বাচনের ফর্ম পূরণের জন্য ডাকা হয়েছিল, সেদিন আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিন ও ধার্য ছিল। কিন্তু আমাদের অনেক বন্ধুই বুঝতে না পেরে কম টাকা নিয়ে এসেছিলেন, তাই অনেকের কাছেই ফি ছিলনা। স্যারকে ব্যাপারটা বলার পর স্যার মাইকে নিজে ঘোষণা করলেন যে, যাঁদের টাকা লাগবে ফি দেবার জন্য তাঁরা যেন স্যারের কাছ থেকে নিয়ে যান। কিন্তু অনেকেই তারপর জিজ্ঞেস করেছিল যে “স্যার আমরা আপনাকে কখন টাকাটা পরিশোধ করব?” কারণ অনেকেই তো সেদিন ই ঢাকার বাইরে বাড়িতে চলে যাবে। স্যার শুধু বলেছিলেন ” আপনাদের যখন ইচ্ছা দিবেন, না দিলেও সমস্যা নেই”। আমি যদিও স্যারের বিভাগে পড়াশোনা করি নাই। কিন্তু সেদিন থেকে স্যারকে যখন কলিগ হিসাবেও পেয়েছিলাম, সবসময় ই এক অসাধারণ মানুষ মনে হয়েছে। আল্লাহ্‌ যেন স্যারকে জান্নাতবাসী করেন এই দোয়া করি।

Kamrul Akhandh
উনার সাথে আমার সরাসরি কয়েকবার দেখা হয়েছে, উনি ছিলেন অকৃতদার, নিজের বেতনের পয়সায় চলতেন। কোন গরীমা ছিলনা তাঁর ভেতরে, উনার রুমে একটা কাঠের চেয়ারে বসে অনেক পুরনো পুরনো বই এবং জিনিস পত্রের মাঝে সময় কাটাতেন। আমি দেখেছি যেখানে ব্যাংক এ প্রফেসর রা ম্যানেজার এর চেম্বারে বসে টাকা নিতেন আর স্যার লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা উত্তোলন করতেন — নির্লোভ, সৎ এই মানুষটিকে আল্লাহ জান্নাত নসীব করুক। আমীন।

 

খুব সহজে নিজ শহরে চাকরি খুঁজতে সম্ভব এপস ডাউনলোড করুন!

এপস ডাউনলোড লিংক

error: Content is protected !! Admin