প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ৩০ দিনের সুপার সাজেশন। ২০২২ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হতে পারে; এমনটাই জানা যাচ্ছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে (যদিও সবকিছু নির্ভর করছে প্রাথমিক শিক্ষক অধিদপ্তর ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর)। সেই হিসেবে আর প্রায় ৩০ দিনের মতো বাকি প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার!
শিগগিরই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা শুনে অনেকেই চিন্তায় পড়ে গেছেন এই ভেবে- ‘এতো দিন তেমন কিছু পড়লাম না, এখন কীভাবে কী করব? আমি কীভাবে এতো অল্প সময়ে ভালো প্রস্তুতি নেব? কীভাবে পরীক্ষায় পাস করতে পারব? আমি কি আসলেও পরীক্ষায় পাস করতে পারবো? ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে।
এই অল্প সময়ে শর্টকাটে কী কী পড়বেন? আমি মনে করি, যেহেতু সময় কম তাই সব না পড়ে কেবল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়ুন। মানে, যেখান থেকে বেশি বেশি কিংবা বারবার প্রশ্ন আসে; সেই টিপিকগুলো যত্নসহকারে পড়ুন।
এখন প্রশ্ন হলো আমি তা কীভাবে বোঝবো? উত্তর একদম সহজ- আপনি যদি প্রাইমারি সহকারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ভালোভাবে খেয়াল করেন, তাহলে দেখতে পাবেন কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছে।
যেমন-
বাংলা অংশে বাংলা ব্যাকরণ থেকে প্রশ্ন থাকে বেশি থাকে এবং সাহিত্য থেকে কম আসে। দেখা গেছে যে, বাংলা অংশে ২০টি প্রশ্নের মধ্যে বাংলা ব্যাকরণ থেকে ১৮ থেকে ১৯ এর মতো প্রশ্ন থাকে এবং বাকি ১-২টি প্রশ্ন থাকে সাহিত্য থেকে। তাই এখন বাংলা সাহিত্য না পড়ে আগে ব্যাকরণ অংশ ভালোভাবে জোর দিয়ে পড়ুন। এখন আর পড়ার দরকার নেই। একান্তভাবে পড়তে চাইলে শুধু প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্নের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, জহির রায়হান, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও জসীমউদদীন পড়ুন। ব্যাকরণে প্রথমে কারক-বিভক্তি ভালো করে পড়ুন, এখান থেকে ২ থেকে ৪ টি প্রশ্ন থাকে, তারপর এক কথায় প্রকাশ, সমাস এই টপিকগুলো ভালো করে পড়ুন। সঙ্গে বাগধারা, সন্ধি, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ।
ইংরেজি পার্টে ইংরেজি গ্রামার থেকে প্রশ্ন থাকে ১৯-২০। মানে ইংরেজি সাহিত্য থেকে মাঝে মধ্যে একটি প্রশ্ন থাকে। যেমন, সর্বশেষ ২০১৯ সালে চার ধাপে ৯ সেটে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল ইংরেজি সাহিত্য থেকে। আর সেটি ছিল দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায়। অর্থাৎ, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৯ সেটে মোট ৭২০টি এমসিকিউ প্রশ্নের মাঝে কেবল ১টি প্রশ্ন ছিল ইংরেজি সাহিত্য থেকে!
আরও পড়ুনঃ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে।
তাই আমি বলব, শর্টকাটে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই মুহূর্তে ইংরেজি সাহিত্য পড়া বাদ দিন। আর একান্ত পড়তে চাইলে শুধু প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্ন + William Shakespeare, John Milton এবং G.B. Shaw এর রচিত গ্রন্থের নামগুলো পড়তে পারেন। না পড়লেও বিশেষ সমস্যা নেই।
তাহলে এখন English Grammar এ আগে Vocabulary না পড়ে থাকেন তাহলে নতুন করে না পড়াই উচিত। English Grammar এ বেশি জোর দিন Parts of Speech, Tense। এই ২ টপিক থেকে ৪-৫টা প্রশ্ন থাকতে পারে। তারপর Preparation, Correct Spelling, Right form of Verbs, Subject Verb Agreement, Voice Change, Narration, Sentence Correction পড়তে পারেন। সঙ্গে পড়ে ফেলুন Conditional Sentence.
এবার আসা যাক গণিতের অংশে– গণিতের জন্য বীজ গণিতের মান নির্ণয়, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, সুদ-আসল, গড়, সংখ্যা, উৎপাদক, অনুপাত ও ভগ্নাংশ পড়ুন। সঙ্গে ল.সা.গু. ও গ.সা.গু., ঐকিক নিয়ম । বাকি সব বাদ দিন। এখানে বলে রাখি- শতকরা, গড় ও বীজগণিতের মান নির্ণয় থেকে প্রশ্ন বেশি থাকে। জ্যামিতির অংশ থেকে কেবল বিভিন্ন প্রকার কোণ, সমকোণী ত্রিভুজ, বর্গক্ষেত্র ও আয়তক্ষেত্র পড়ুন, বাকি সব বাদ দিন।
সর্বশেষ আসি সাধারণ জ্ঞান অংশে- সাধারণ জ্ঞানের অংশে বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি- এই চার বিষয়ের ওপর সাধারণত ২০ নম্বর থাকে। তবে মাঝেমধ্যে ভূগোল ও পরিবেশ থেকে ১-২টা প্রশ্ন এসে থাকে।
তবে মজার বিষয় হল, বিগত সালের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে দেখা গেছে- সাধারণ জ্ঞানের ২০ নম্বরের মাঝে ১২-১৪ টি প্রশ্ন আসে বাংলাদেশে বিষয়াবলি থেকে। বাকি ৬-৮টি প্রশ্ন এসে থাকে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং ভূগোল ও পরিবেশ থেকে।
সাধারণ জ্ঞানের জন্য বাংলার প্রাচীনযুগ ও মধ্যযুগ পড়ুন। এরপর বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ৬ দফা, মুজিবনগর সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মোঘল আমল, ইংরেজ আমল ভালো করে পড়ুন। সঙ্গে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পড়ুন।
সাধারণ জ্ঞানের অংশে বীরশ্রেষ্ঠগুলো ভালো করে পড়ুন। (তাদের জেলা, জন্ম সাল এসব পড়ে মাথা নষ্ট করবেন না কিন্তু! এই মুহূর্তে বিজ্ঞান, ICT নতুন করে আর কিছু পড়বেন না। আন্তর্জাতিক থেকে তেমন প্রশ্ন থাকে না। ২-১ টা যা থাকে কেবল জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থার সদরদপ্তর কোথায়?- এই জাতীয় প্রশ্ন থাকে। তাই বাকি সব বাদ দিন। আর সাম্প্রতিক থেকে ১-২টা প্রশ্ন থাকে। তাই সব না পড়ে কেবল আলোচিত ঘটনাগুলো পড়ুন। বাকি সব বাদ দিন। সময় না পেলে সাম্প্রতিক না পড়াই উচিত। পড়লেও কেবল পরীক্ষার ১-২ দিন আগে পড়বেন। এখন পড়লে আবার ভুলে যেতে পারেন।
প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সামগ্রিক প্রস্তুতির জন্য উপরিউক্ত টপিকগুলো ছাড়াও বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে পারেন; বিশেষ করে ৩৫তম-৪৩তম।
তবে, বিসিএস প্রিলির সুশাসন, ভূগোল, ইংলিশ লিটারেচার, বাংলা লিটারেচার এসব চাইলে বাদ দিয়ে পড়তে পারেন। তাহলে দ্রুত শেষ করতে পারবেন। হাতে সময় না থাকলে এইসবের ব্যাখ্যা না পড়ে শুধু উত্তরগুলো পড়লেই হবে।
এরপর আপনি পরীক্ষা হলে পরীক্ষার দেয়ার আগে নিজে নিজে বাসায় বসে ঘড়ি ধরে মডেল টেস্ট থেকে পরীক্ষা দিয়ে দেখুন, আপনি কত পান। মডেল টেস্ট বইটি বিষয়ভিত্তিক হলে ভালো। মানে– বাংলা-২০, ইংরেজি -২০, সাধারণ-২০, গণিত-২০ এভাবে আলাদা করে দেওয়া থাকতে হবে।
উল্লেখ্য যে, পরীক্ষার্থী যেহেতু ১৩ লাখ। তাই একসঙ্গে সব জেলায় পরীক্ষা হওয়ার সম্ভবনা কম। পরীক্ষা হবে শুধু এমসিকিউ এবং ভাইভা। রিটেন হবে না। মনে রাখবেন, এই কয়দিন দিন ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনার ও আপনার পরিবারের ভাগ্যে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। তাই সময় নষ্ট না করে বেশি বেশি পড়ুন শুধু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো; যেন পরীক্ষার হলে গেলে কনফিউজ না হন।
আরেকটি কথা মনে রাখবেন, এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, নিজের সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি ১ ঘণ্টা বেশি পড়া মানে ১ ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে।
© শিশির আসাদ