সাড়ে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগে চাকরি নামক সোনার হরিণ লুফে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে এবার সব মিলিয়ে সাড়ে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। দেশের ইতিহাসে সরকারি কোনো চাকরিতে এটিই সবচেয়ে বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেডে উন্নীত হওয়ায় অনেকেরই আগ্রহ বেড়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে মোট নম্বরঃ
গতবারের মতো এবারও প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মোট নম্বর ১০০। এর মধ্যে লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষায় ৮০ আর মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর ২০। এমসিকিউ পরীক্ষায় পাস হলে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে। মৌখিক পরীক্ষায় টিকলে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হবে। বুঝতেই পারছেন আপনার জন্য একটা বড় সুযোগ অপেক্ষা করছে। এই সুযোগ হাতছাড়া করার প্রশ্নই আসে না।
আরও পড়ুনঃ জব সল্যুশন বইটি শেষ করবেন যেভাবে!
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থী সংখাঃ
সারা দেশে এ বছর ১৩ লাখের মতো প্রার্থী আবেদন করেছেন, গতবার এ সংখ্যা ছিল প্রায় ২৬ লাখ। এ বছর আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই কমপক্ষে স্নাতক পাস চাওয়া হয়েছে। তাই আবেদন গত বছরের তুলনায় কম পড়েছে। তবে বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেডে উন্নীত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীদেরও আগ্রহ বেড়েছে। তাই অনুমান করা যায়, প্রার্থী তুলনামূলক কম থাকলেও প্রতিযোগিতা কঠিনই হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রস্তুতির ছক ঠিক করতে হবে।
- মোট আবেদনকারী : ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন।
- মোট নিয়োগ : ৩২,৫৭৭ জন।
- প্রাক-প্রাথমিক ২৫,৬৩০ + সহকারী শিক্ষক ৬,৯৪৭।️
- ৪০ জনের বিপরীতে নিয়োগ পাবেন ১ জন।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে মানবন্টনঃ
কর্তৃপক্ষ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ করে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের কথা চিন্তা করে ২০ শতাংশ পদে বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী প্রার্থীকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, আগের মতোই ৬০ শতাংশ নারী, ২০ শতাংশ পোষ্য এবং ২০ শতাংশ পুরুষ প্রার্থী নিয়ে পদগুলো পূরণ করা হবে। তাই বিজ্ঞান ছাড়া অনান্য বিষয়ে স্নাতক করা প্রার্থীদের প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে একটু বেশিই পড়াশোনা করতে হবে।
- মোট নম্বর ১০০।
- লিখিত ৮০ এবং মৌখিক ২০।
- প্রতিটি প্রশ্নের মান ১।
- প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। অর্থাৎ চারটি উত্তর ভুল হলেই কাটা যাবে ১ নম্বর।
- লিখিত ৮০ এর মধ্যে বাংলা -২০, ইংরেজি -২০, গনিত -২০ এবং সাধারন জ্ঞান ও বিজ্ঞান -২০।
- মৌখিক পরীক্ষার ২০ এর মধ্যে উপস্থিতি- ৫, স্মার্টনেস – ৫, এস এস সি ও এইচএসসির ফলাফলের উপর – ৫, প্রশ্নের উত্তর – ৫।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার হলে করণীয়ঃ
প্রবেশপত্র সঙ্গে আনতে হবে। বই, উত্তরপত্র, নোট,
কাগজপত্র, ক্যালকুলেটর, মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রিক ঘড়ি ও কোনো ধরনের ইলেকট্রিক ডিভাইস সঙ্গে রাখা যাবে না। উত্তরপত্র পূরণ করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। অসাবধানতাবশত ভুল হলে উত্তরপত্র বাতিল হতে পারে। কালো কালির বলপয়েন্ট কলম দিয়ে ওএমআর উত্তরপত্র পূরণ করা ভালো। প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরের জন্য একটি বৃত্তাকার ঘর ভরাট করতে হবে। একই প্রশ্নের উত্তরে
একাধিক উত্তরটি বাতিল হবে ও নম্বর কাটা যাবে।
কোনো প্রশ্নের উত্তর ভুল হলে তা কেটে অন্য কোনো ঘর ভরাট করা যাবে না। ওএমআর শিট ভাঁজ করা যাবে না, নির্ধারিত ঘর ছাড়া উত্তরপত্রের অন্য কোথাও দাগ দেয়া যাবে না। রোল নম্বর, প্রশ্নপত্রের সেট কোড, জেলা কোড, উপজেলা/থানা কোড, সেক্স কোড নম্বর অবশ্যই পূরণ করতে হবে, নইলে উত্তরপত্র বাতিল হবে। ওএম আর শিটে রোল নম্বরের ঘর পূরণ করার সময় রোল নম্বরের নিচের বৃত্তাকার ঘরগুলোতে সঠিক সংখ্যা কালো কালির বলপয়েন্ট কলম দ্বারা পুরো ভরাট করতে হবে। হাজিরা শিটে খাতার ক্রমিক নম্বর ও প্রশ্নের সেট
নম্বর লিখে নির্ধারিত ঘরে প্রার্থীকে স্বাক্ষর করতে
হবে।
আরও পড়ুনঃ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা জানুয়ারি ২০২২।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তুতিঃ
ভাল প্রস্তুতি নিতে হলে নিয়মিত পড়াশুনার বিকল্প নেই। করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের মধ্যে কোচিং সেন্টারে গিয়ে ব্যাচে পড়াও সম্ভব হয়ে উঠছে না। কিন্তু আপনি সিরিয়াস হলেই ঘরে বসেই প্রস্তুতি নিতে পারেন। স্বপ্ন যদি হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা; তাহলে আর দেরি কেন? যেভাবে পড়লে প্রাইমারি শিক্ষক হিসেবে আপনার চাকরি হবেই।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বাংলা প্রস্তুতিঃ
বাংলা অংশে ব্যাকরণের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড প্রণীত ব্যাকরণ বইয়ের সব অধ্যায় উদাহরণসহ ভালোভাবে পড়তে হবে। জানতে হবে কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম ও জীবনী সম্পর্কে। এসএসসি ও এইচএসসি বোর্ড বইয়ের লেখক পরিচিতি ও সাধারণ জ্ঞান বইয়ের সাহিত্যিক পরিচিত, বই পরিচিতি অংশ পড়লে অনেকটা সহায়ক হবে। বিগত পরীক্ষায় যা এসেছে : ২৭ জুন ও ২৮ আগস্ট ২০১৫ নিয়োগের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ব্যাকরণ থেকে ভাষা, বর্ণ, শব্দ, সন্ধি বিচ্ছেদ, কারক, বিভক্তি, উপসর্গ, অনুসর্গ, ধাতু, সমাস, বানান শুদ্ধি, পারিভাষিক শব্দ, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ থেকে প্রশ্ন এসেছে। সাহিত্য অংশে গল্প বা উপন্যাসের রচয়িতা, কবিতা পঙ্ক্তি উল্লেখ করে কবির নাম থেকে প্রশ্ন ছিল।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ইংরেজি প্রস্তুতিঃ
ইংরেজি গ্রামারে Right forms of verb, Tense, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Spelling, Sentence Correction-এর নিয়ম জানতে হবে এবং গ্রামার বইয়ের উদাহরণ থেকে চর্চা করতে হবে। মুখস্থ করতে হবে Phrase and Idoims, Synonym, Antonym ভালোভাবে শিখতে হবে। বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করলে ভালো করা যাবে। বিগত পরীক্ষায় যা এসেছে : বিগত দুই পর্যায়ের পরীক্ষায় ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ এসেছে।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে গণিত প্রস্তুতিঃ
পাটিগণিতের পরিমাপ ও একক, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত, শতকরা, সুদকষা, লাভক্ষতি, ভগ্নাংশ, বীজগণিতের সাধারণ সূত্রাবলী থেকে প্রশ্ন থাকে। মুখে মুখে ও সূত্র প্রয়োগ করে সংক্ষেপে ফল বের করার প্র্যাকটিস করতে হবে। যাতে প্রশ্ন দেখামাত্রই সূত্র প্রয়োগ করে ফল বের করা যায়। জ্যামিতিতে প্রস্তুতি ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গক্ষেত্র, রম্বস, বৃত্ত ইত্যাদির সাধারণ সূত্র ও সূত্রের প্রয়োগ দেখতে হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যবই বিশেষত অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করলে ভালো হবে।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সাধারণজ্ঞান প্রস্তুতিঃ
যা গুরুত্ব দিয়ে পড়া প্রয়োজন : প্রশ্ন বেশি আসে বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, বিখ্যাত স্থান, বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ, জাতীয় দিবস থেকে প্রশ্ন আসে।
আন্তর্জাতিক অংশে বিভিন্ন সংস্থা, দেশ, মুদ্রা, রাজধানী, দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা থেকে খেলাধুলা প্রশ্ন থাকে।
সাধারণ বিজ্ঞান থেকে বিভিন্ন রোগব্যাধি, খাদ্যগুণ, পুষ্টি, ভিটামিন থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। নিয়মিত বেশি বেশি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করলে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নের উত্তর সহজ হবে।
বিগত পরীক্ষায় যা এসেছে : বিগত দুই ধাপের পরীক্ষায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে প্রশ্ন করা হয়।