ইডেন মহিলা কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষে পুরান ঢাকার চকবাজারে হাজী সেলিমের মালিকানাধীন আশিক টাওয়ারের হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজ করতেন নাসরিন জাহান। অফিস শেষে এক রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন স্বামী সালেহ মোহাম্মদ লিপু আর স্ত্রী নাসরিন আক্তার তাদের ছেলে আফতাহীকে (৮) নিয়ে।
চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে ডান পাশের রাস্তায় ছিল সর্বশেষ অবস্থান মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে। সকাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে ভাই, ভাবী আর ভাতিজার খোঁজে দাঁড়িয়ে আছেন লিপুর ভাই ইসমাইল হোসেন।শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে ডিএনএ’র নমুনা দিয়ে আহাজারি করছিলেন
নাসরিন আক্তারের ভাই আনোয়ার হোসেন রনি।লিপুর ভাই ইসমাইল বলেন, জানি না ভাই-ভাবি-ভাতিজা কোথায় আছেন। আগুনের পরে মোবাইলে কল দিয়েছি, বন্ধ দেখাচ্ছে। আমার ভাতিজাও ছিল এক রিকশায়। জানি তাদের আর ফিরে পাবো না। কিন্তু শেষবারের মতো দেহটাও পেলে নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারতাম।
সবাই বলছে কেউ বেঁচে নেই মর্গে গিয়ে সবগুলো মরদেহ দেখেছি কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।বোন নাসরিন আক্তারের কথা জিজ্ঞেস করলে আনোয়ার হোসেন রনি বলেন, মাত্র ২০ দিন হয়েছে অফিস কাছে হবে বলে তারা নতুন বাসা নিয়েছিল। ভাই একটি বেসরকারি আইসক্রিম কোম্পানির বিতরণ কর্মকর্তা। আমাদের সব শেষ কি নিয়ে বাঁচবো আমরা।তিনি বলেন, উর্দু রোড থেকে ৪-৫ মিনিটের দূরত্বে ছিলেন তারা। অফিসে সিসিটিভি ফুটেজে বের হয়ে যাওয়ার ছবি দেখেছি এটিই আমাদের শেষ দেখা।
ইসলামপুর থেকে আমার বোনের অফিস করতে ঝামেলা হতো। তাই নন্দ কুমার রোডের এই বাসায় চলে আসে তারা। ভাতিজাসহ এক রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন তারা।রাত ১০টার পরে আর কোনো হদিস পাচ্ছি না তাদের। সব জায়গায় খুঁজলাম এখনো কিছু জানতে পারলাম না। একসঙ্গেই তারা চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে। আর কোনদিন ফিরবেন না। তাদের সঙ্গে আর কোনদিন কথা হবে না। আমার বোন আর আমাকে ডাকবে না।
আট বছরের ভাতিজা আফতাহী পড়তেন বকশীবাজারের বীকন স্কুলে। সেও ছিল ওই রিকশায়। তিন মিনিট দূরেই ছিল বাসা। প্রতিদিনের মতো সেদিন রাতেও বাসায় ফিরছিলেন তারা। রাতের খাবার একসঙ্গে খেয়ে বাসায় যেতেন সব সময়।ধারণা করা হচ্ছে আগুনে পুড়েছেন তিন জন। কোথাও তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
সর্বশেষ সিআইডির নমুনা সংগ্রহ টিমের কাছে রক্ত ও লালার স্যাম্পল দিয়ে রাখছেন তারা।ঢামেক হাসপাতালের মর্গের সামনে এমন অসংখ্য মানুষের স্বজনদের ভিড় লক্ষ করা গেছে সকাল থেকেই। কেউ ভাই খুঁজছেন, কেউ খুঁজছেন বাবা আবার কেউ খুঁজছেন প্রিয় মায়ের মুখ