মাস্টার স্ট্র্যাটেজি ফর প্রাইমারি এক্সাম হল। যারা প্রাথমিক প্রথম ধাপের পরীক্ষায় অংশ নেবেন তাদের নিমিত্তে- প্রথম কথা প্রিপারেশন যা নেয়ার তা নিয়ে ফেলেছেন। কাজেই প্রিপারেশন নিয়ে আর কোন কথা বলা উচিৎ বৈকি! তাই সোজাসুজি কাজের কথায় চলে যাই।
আগামী ছয় সাত টা দিন শুধু রিভিশন এর উপর থাকবেন। একদম উরাধুরা রিভিশন যাকে বলে। মনে রাখবেন এই চাকরিটা আপনাকে পেতেই হবে। আর চাকরি পেতে হলে আপনাকে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান প্রতিটা বিষয়ে অসাধারণ পারফরমেন্স দিতে হবে। যে টপিক যেখান থেকে আগে পড়েছেন ওখান থেকেই রিভিশন দেবেন। নতুন করে অন্য জায়গা থেকে নতুন কিছু পড়তে যাওয়াটা কঠিন হবে যদি না আপনার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ বা কনফিডেন্স থাকে!
এবার আসি আসল কথায়। প্রিপারেশন আপনার যেমনই হোক আসল খেলা কিন্তু খেলতে হবে পরীক্ষার হলে। সময় ৬০ মিনিট। প্রশ্ন ৮০ টা। আপনি যদি পুরুষ প্রার্থী হন তাহলে প্রশ্ন যেমন ই হোক চাকরি নিশ্চিত করতে ৮০ তে আপনাকে ৬৫+ পেতেই হবে। এলাকা ভেদে নাম্বার বাড়তে কমতেও পারে। গত নিয়োগে স্মরণ কালের সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হয়েছে। তবুও অনেক এলাকায় ৬৫ পেয়ে ভাইভা দিলেও চাকরি হয়নি। কাজেই টার্গেট ঐরকম রাখতে হবে। এর কম মার্কস পেয়ে অনেকে ভাইভা দেবেন হয়তো। কিন্তু চাকরি হবেনা সেটা শতভাগ নিশ্চিত। আর আপনি যদি নারী হন তাহলে আপনার জন্য ৫৫+ সেফ। এলাকা ভেদে বাড়তে কমতে পারে।
এখন এই ৬৫+ কিভাবে তুলবেন? দেখেন আপনার প্রিপারেশন ভাল হলে ঠান্ডা মাথায় আপনি বাংলা ১৬+ ,ইংরেজি ১৫+ , সাধারণ জ্ঞান ১৬+ , গণিতে ১৫+(অনেকে ২০ ই তুলবে) তুলতে পারবেন। কিন্তু বাকি ৫ থেকে ৭ মার্কস তুলতে হলে নিজের কনফিডেন্ট এর উপর নির্ভর করতে হবে আপনাকে। উদাহরণ হিসেবে আমি নিজের কথাই বলি। পরীক্ষা হলে ঢুকার আগেই আমি মনে মনে পণ করেছিলাম যতগুলা পারি চিন্তাভাবনা করে সর্বোচ্চ ততগুলো দাগায়া আসবো। প্রয়োজনে ৮০ টাই দাগাবো। আমি ৭৮ টা দাগিয়েছিলাম। ৭০ টা হয়েছিল। ৮ টা ভুল। মার্ক্স ছিল ৬৮। ব্যাস মেধা তালিকায় অষ্টম হয়ে চাকরিতে জয়েন করি। কাজেই বুঝেশুনে চিন্তাভাবনা করে যতগুলা দাগানো যায় দাগাবেন। মনে রাখবেন ১০ টা ৫০-৫০ চান্স দাগানোর পর যদি আপনার ৩ টা হয় আর ৭ টা ভুল হয় তাহলেও আপনার মার্ক্স ১.২৫ বারে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ভাল প্রিপারেশন নিয়ে ১০ টা ৫০-৫০ দাগালে অন্তত ৪/৫ টা হয়ে যায়। এটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বললাম। একটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট কথা মনে রাখবেন। নেগেটিভ মার্কস প্রতি ভুল উত্তরের জন্য মাত্র .২৫। এটা কিন্তু বিসিএস না।
এবার আসি টাইম ম্যানেজমেন্ট এ। যারা নিয়মিত ব্যাংকে পরীক্ষা দিয়ে থাকেন তারা এই পার্ট টুকু স্কিপ করতে পারেন। কারণ যিনি ৬০ মিনিটে ১০০ প্রশ্ন পরে ৯০এর মত প্রশ্ন এনসার করে থাকেন তার কাছে ৬০ মিনিটে ৮০ এমসিকিউ স্রেফ দুধভাত।
আপনারা সময় কে দুইভাবে ভাগ করবেন। প্রথম ৩০ মিনিট গণিত বাদে অন্য সব টপিক। শেষের ৩০ মিনিট গণিত। ভেবে দেখেন প্রথম ৩০ মিনিটে যখন বাংলা, ইংরেজি আর জিকে মিলে প্রায় ৫০ টা দাগায়ে ফেলবেন তখন কি কনফিডেন্স টাই না পাবেন আপনি গণিতের বেলায়। বাকি 30 মিনিট এর 25 মিনিট দেবেন ২০ টা অংকে। যদি ২০ টাই পারেন তাহলে তো কথাই নেই। যদি না পারেন দেখবেন ১৬/১৭ টা হয়ে গেছে। ওকে। এরপরের ৫ মিনিট দেবেন যে প্রশ্নগুলো কনফিউজড হয়ে ছেড়ে আসছেন সেগুলোতে। ওখান থেকে ৭/৮+ দাগানোর চেষ্টা করবেন।
শেষে এসে একটা প্রশ্ন করি এখন আপনাদের। আপনারা এক্সাম হলে এমসিকিউ কিভাবে দাগান?? একটা করে পড়ে একটা করে দাগান?? এভাবে দাগিয়ে যদি আপনি সময় কভার করতে পারেন তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি সময়ের মধ্যে শেষ করতে না পারেন তবে আসেন একটা নিনজা টেকনিক শিখাইয়া দেই। আগে ম্যাথ বাদে সবগুলা প্রশ্ন পড়বেন আর সাথে সাথেই প্রশ্নে উত্তর গুলা মার্ক করে যাবেন। আর যেটা পারবেন না সেটা গোল দাগ দিয়ে যাবেন। তারপর এক টানে ওএমআর ভরাট করে ফেলবেন। তবে মনে রাখবেন সব মিলিয়ে সময় কিন্তু ৩০ মিনিট। ওকে। এরপর যাবেন ম্যাথ অংশে। ম্যাথ ও প্রথমে ২০ টা পড়ে একটা একটা করে প্রশ্নের মধ্যে সলভ করে যাবেন। তারপর সবগুলা করা শেষে ওএমআর ভরাট করবেন। তবে এখানেও কিন্তু মনে রাখবেন সময় কিন্তু এক্ষেত্রে ২৫ মিনিট। আমি গ্যারান্টি আপনার আর টাইম নিয়ে পরীক্ষার হলে সমস্যা হবে না। তবে তার আগে একটা শর্ত মানতে হবে আপনাকে। আগামী এক সপ্তাহে ডেইলি অন্তত দুইটা করে মডেল টেস্ট দেবেন বাসায় নিজে নিজে। এবং সময় ধরবেন ৪০ মিনিট। বাসায় ৪০ মিনিটে ৮০ এমসিকিউ প্র্যাকটিস করলে এমনিতেই আপনি ফাস্ট হবেন।
ভেবেছিলাম পোস্ট ছোট হবে। কিন্তু বড় হয়ে গেলো। এজন্য অত্যন্ত দুঃখিত। মন দিয়ে পড়ুন। প্রার্থনা করুন। শুভকামনা সবার জন্য।
- নিবেদনে,
- মো: আসিফ রেজা
- সহকারী শিক্ষক (ব্যাচ-২০২৩)
- সুবর্ণতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
- নাগরপুর, টাঙ্গাইল।