চোখ হারানো সেই সিদ্দিকুর এখন কেমন আছেন?

২০১৭ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর শাহবাগে পরীক্ষার সময়সূচির দাবিতে আন্দোলনে নেমে পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারানো সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। এ ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, কে নেবে তার দায়িত্ব? তার সহপাঠিরা তার একটি চাকরির দাবি জানায় সরকারের কাছে। সরকারের পক্ষ থেকে সে দাবিও মানা হয়।সেই দাবি ও মানবিক দৃষ্টি কোন হতে তার চাকরির জন্য জোর দাবি আসে.

 

গত ১৩ সেপ্টেম্বর সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে অস্থায়ী ভিত্তিতে টেলিফোন অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয় সিদ্দিকুরকে। এ সময় তাঁর বেতন ধরা হয় ১৩ হাজার টাকা। অস্থায়ী এ চাকরিতে ‘নো ওয়ার্ক, নো পেমেন্ট’ ব্যবস্থা। অর্থাৎ যেদিন কাজ করবেন সেদিনের টাকাই দেয়া হয়। অনুপস্থিত থাকলে ওইদিনের টাকা দেয়া হয় না। 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২ অক্টোবর চাকরিতে যোগ দেন সিদ্দিকুর। অক্টোবর মাসে পরীক্ষা থাকায় কয়েকদিন ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। ওই মাসে বেতন পেয়েছিলেন ৬৯০০ টাকা। এরপর নভেম্বর মাসে ৯ এবং ডিসেম্বর মাসে ১১ হাজার টাকা বেতন পান তিনি। দৌনিক কাজ হিসাব করে.

 

বর্তমানে সিদ্দিকুর তার মা ছুলেমা খাতুনকে নিয়ে তেজগাঁও এর বেগুনবাড়িতে একটি বাসার নিচতলার একটি রুমে সাবলেট থাকেন। ওই রুমের ভাড়া বিদ্যুৎ বিলসহ প্রতিমাসে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। তাই বেতনের টাকা দিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সিদ্দিকুরকে।

 

সিদ্দিকুরের মা ছুলেমা খাতুন বলেন, ‘এই বেতনে সংসার চলতে অনেক কষ্ট হয়। বাড়ি থেকে আমার বড় ছেলে নায়েব আলী চাল এবং সবজিসহ অনেককিছু দিয়ে যায়। বেতনের টাকাসহ এগুলো দিয়ে কোনোরকমে চলি।’

 

জানা গেছে, সিদ্দিকুরকে ভারত থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর সরকার থেকে আর্থিকভাবে কোনো সাহায্য করা হয়নি। চিকিৎসার ব্যয় ছাড়া বেসরকারিভাবেও কোনো আর্থিক সহায়তা নেয়নি সিদ্দিকুরের পরিবার।

 

সিদ্দিকুর বলেন, ‘অনেকেই আর্থিক সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমি বারণ করে দিয়েছি। আমি চাই, নিজের উপার্জিত টাকা দিয়েই চলব।’

 

সিদ্দিকুর যে চাকরিতে কর্মরত আছেন তা এক বছর পর স্থায়ী হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ চাকরি থেকে সরকারিভাবে কোনো বাসা বরাদ্দ পাবেন না সিদ্দিকুরের পরিবার। তবে তার মায়ের আশা, ‘সরকার যদি আমাদের থাকার জন্য একটা বাসার ব্যবস্থা করে দিত…’তাহলে হয়তো কিছুটা সহয়োগিতা পাওয়া যেত

সিদ্দিকুরের চাকরির সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ৯ ঘন্টা। সকালে তার মা তাকে পৌঁছে দিয়ে আসেন এবং বিকেলে আবার বাসায় আনেন। এরপর বাসাতেই দিন কাটে সিদ্দিকুরের। মাঝে-মাঝে বন্ধুরা এসে ঘুরতে নিয়ে যায় তাকে।

জীবনের আলো হারিয়ে দিশেহারা সে ও তার পরিবার 

সিদ্দিকুর বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে আমার মা আমাকে দিয়ে আসেন এবং বিকেলে আবার নিয়ে আসেন। অফিসের সবাই আমার প্রতি অনেক আন্তরিক। বিশেষকরে আমাদের এমডি ড. এহসানুল করিম স্যার অনেক আন্তরিক। উনি মাঝে মাঝে আমাকে দেখে যান। আমাকে না দেখলেই সবাইকে জিজ্ঞেস করেন তিনি। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’

 

সিদ্দিকুর বলেন, ‘ডিউটি শেষে বাসাতেই বেশিরভাগ সময় কাটাই। মাঝে-মাঝে শেখ ফরিদ, শাহ আলী, রানাসহ কয়েকজন বন্ধু মিলে বাইরে যাই, ঘুরি। আমি স্বাভাবিক জীবন কাটানোর চেষ্টা করি। যদিও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সবমিলিয়ে এখন ভাল আছি।’

 

তিনি বলেন, ‘নিজেকে নিয়ে এখন আমার আর কোনো চাওয়া নেই। কিন্তু যে কারণে আন্দোলনে নেমেছিলাম, সেই ৭ কলেজের সমস্যা এখনও নিরসন হয়নি। এখন ৭ কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করার আন্দোলন করা হচ্ছে। যদিও এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাপার। তবে আমার কথা হচ্ছে, অধিভুক্ত হয়ে কি এমন পেয়েছে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা? কিন্তু সময়তো চলে যাচ্ছে। যা আর ফিরে আসবে না। এখনও সমস্যা নিরসন হয়নি। এটাই আমাকে খুব কষ্ট দেয়।’

 

তিনি বলেন, ‘৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা কি বানে ভাসা? একবার অধিভুক্ত করবে আবার বাতিল করবে। এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের কি অবদান কম? স্বাধীনতা যুদ্ধসহ প্রত্যেকটি অর্জনেই এই ৭ কলেজের ভূমিকা আছে। তাহলে ৭ কলেজকে নিয়ে কেন এত ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার একটাই চাওয়া ছিল, ৭ কলেজের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক। আমি পরিবারের ছোট ছেলে। সবার আশা ছিল আমার প্রতি। আমিতো সঙ্গত কারণেই আন্দোলনে গিয়েছিলাম। নাহলে আমি কি কখনো আন্দোলনে নেমেছি ঢাকায়? আমি এখনও ব্যক্তিগতভাবে কিছুই চাই না। আমি চাই ৭ কলেজের অচলাবস্থা নিরসন হোক।’

আমরা সকলে চাই সিদ্দিকীর ভাল ভাবে বেচে থাকুক.

About Jahidul Islam

jahidul Islam palash BBA complete Comilla victory college.

Check Also

Comilla Board HSC English 2nd Paper Question Solution 2024

Comilla Board HSC English 2nd paper exam has been conducted today nationwide. Comilla Board HSC …