আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি সাত কলেছের শিক্ষার্থীর ভোগান্তির যেন শেষ নেই। বছরের পর বছর এ দুই সংকট নিয়ে দফায় দফায় আন্দোলন করেও দাবি আদায় হয়নি এখনও। এসব সংকটে পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা কলেজ :
ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়নরত। ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ৪টি বাস (পদ্মনীল-মিরপুর, শঙ্খনীল-যাত্রবাড়ী, পুষ্পক-গাজীপুর, শঙ্খচিল-রামপুরা)। কলেজটির রয়েছে ৮টি ছাত্রাবাস (দক্ষিণ ছাত্রাবাস, দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাস, ইলিয়াস ছাত্রাবাস, শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাস, ইন্টারন্যাশনাল ছাত্রাবাস, উত্তর ছাত্রাবাস, ওয়েস্ট ছাত্রাবাস ও নবনির্মিত শেখ কামাল ছাত্রাবাস)। এছাড়াও রয়েছে একটি করে শরীর চর্চা কেন্দ্র, লাইব্রেরি ও রিডিং রুম। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী কাইয়ুম হোসেন বলেন, আমাদের ক্লাসরুমের সংকট রয়েছে। নিয়মিত ক্লাস হয় না। তাছাড়া অনেক ডিপার্টমেন্ট আছে যেখানে পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। আমাদের পুরনো হলগুলো বসবাসের অনুপযোগী যা সংস্কার করা প্রয়োজন। প্রতি রুমে প্রায় ১২ থেকে ১৫ ছাত্র থাকে যা একেবারে মানবেতর অবস্থা। ছারপোকা তো আছেই। এছাড়া হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান খুবই খারাপ। আর কলেজের একমাত্র শরীর চর্চা কেন্দ্র যা ব্যবহার করা হয় না; সবসময়ই বন্ধ থাকে। আমাদের প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৮টি হল রয়েছে। পুরনো হলগুলো বসবাসের অনুপযোগী। নতুন হল নির্মাণ করা দরকার। এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন মোল্লাহ বলেন, আমরা ঢাকা কলেজের আগের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ক্লাসরুমের কিছুটা সংকট রয়েছে, পাশাপাশি ঢাকা কলেজের মূল ভবনটি অতিশয় পুরনো; যা খুব দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
ইডেন মহিলা কলেজ :
ইডেন মহিলা কলেজে প্রায় ৩৫ হাজার ছাত্রীর মধ্যে ৮ হাজার ছাত্রী থাকে কলেজের ৬টি হোস্টেলে। হোস্টেলগুলো হল- খোদেজা খাতুন ছাত্রীনিবাস, বানেছা বেগম ছাত্রীনিবাস, আয়েশা সিদ্দিকা ছাত্রীনিবাস, রাজিয়া ছাত্রীনিবাস, জেবুন নেছা ছাত্রীনিবাস ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব ছাত্রীনিবাস। আর বাকি ২৭ হাজার শিক্ষার্থীকেই ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে আসা-যাওয়া করতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নির্ভর করেন কলেজের পরিবহনের ওপর। আর প্রতি বছরই এ খাতে কলেজের একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করেন শিক্ষার্থীরা। অথচ অর্থ দিয়েও শিক্ষার্থীদের সেবা না দেয়ার নজির প্রতিনিয়তই যেন নিত্যসঙ্গী ইডেন মহিলা কলেজের এ সেবা খাতটির। বাস সংকট ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বাভাবিক ঘটনা। রক্ত কবরী ও চন্দ্র মল্লিকা এ দুটি পরিবহন দিয়ে ২৭ হাজার শিক্ষার্থীকে পরিবহন সেবা দিয়ে আসছে ইডেন মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি একটি দ্বিতল বিআরটিসির বাস সংযুক্ত করা হয়েছে। তাতেও রয়েছে অনেক অভিযোগ, কলেজ ক্যাম্পাস থেকে যে কোনো স্টেশনে নামলে দিতে হয় ২০ টাকা। এটি বাড্ডা হয়ে রামপুরা দিয়ে গুলিস্তান যাতায়াত করেন। রক্ত কবরী চলে মিরপুর আর চন্দ্র মল্লিকা চলে যাত্রাবাড়ী এলাকায়।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী রাফিয়া ইসলাম ও সুমাইয়া ফেরদৌস ইভা বলেন, অনেকটা বাধ্য হয়েই কলেজের বাসে আসতে হয়। প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী ঠাসাঠাসি করে বাসে উঠে ক্যাম্পাসে আসতে হয়। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে বাসের দরজায় ঝুলে ক্যাম্পাসে আসে। এতে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতি বছরই পরিবহন ভাড়া বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৬০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। সে হিসাবে বছরে প্রায় কোটির বেশি টাকার আদায় করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীর পরিবহন সমস্যার নিরসনে কার্যকর কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তাছলিমা আক্তার জানান, ইডেল কলেজের আবাসান, পরিবহন ও অ্যাম্বুলেন্সের অনেক সংকট রয়েছে। ইতিপূর্বে আমরা বিষয়গুলোর নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কথা বলেছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেবেন। এ বিষয়ে ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যাপক ড. শামসুন নাহার শিক্ষক স্বল্পতা, ক্লাসরুম সংকট, আবাসন সমস্যাসহ সব সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। অচিরেই অ্যাম্বুলেন্স, পরিবহন, একাডেমিক ভবন ও হোস্টেলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
তিতুমীর কলেজ :
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী প্রায় ৫৫ হাজার। কলেজটি নানা সমস্যা জর্জরিত। সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্রী তাহমিনা আক্তার পপি বলেন, আমরা হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন জেলা থেকে এসে এখানে পড়ালেখা করি। অথচ প্রায় ৫৫ হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য মাত্র তিনটি হল। ছাত্রদের একটি ও ছাত্রীদের দুটি। এ হলের শিক্ষার্থী ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ৫০০; যা শিক্ষার্থীর তুলনায় কিছুই না। আক্কাছুর রহমান আঁখি হলের আবাসিক ছাত্র মো. মেসবাউর রহমান বলেন, হলে কোনো রিডিং রুম নেই। রুমগুলোতে ৬ জনের থাকার জায়গায় ১৫ জনের বেশি থাকতে হয়। খাবারের মান একেবারেই নিন্ম।
বাঙলা কলেজ :
শিক্ষক স্বল্পতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও আবাসন সমস্যাসহ নানা ধরনের সংকটে ভুগছে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে কলেজের শিক্ষার্থীদের। কলেজটিতে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। কলেজটিতে ছাত্রদের জন্য একটি ছাত্রাবাস থাকলেও আসন রয়েছে মাত্র ১৫০টি। প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার ছাত্র আবেদন করলেও তারা সিট পাচ্ছে না। অন্যদিকে, পরিবহন সংকট। ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য রয়েছে একটি বাস। বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ ইমাম হাসান জানান, কলেজ হোস্টেলের তিনশ ছাত্র ছাড়া বাকি সবাই বাইরে থেকে এসে পড়াশোনা করছে। অথচ তাদের থাকার জন্য কলেজে কোনো ছাত্রীনিবাস নেই। কলেজের যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। কক্ষগুলোর দরজা-জানালা নষ্ট থাকার কারণে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। অধ্যক্ষ আরও জানান, বাঙলা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য শুধু একটি পরিবহন রয়েছে। একই অবস্থা অন্যান্য কলেজগুলোরও।
সূত্র : Daily jugantor