অনার্স পরীক্ষার খাতায় লেখার নিয়ম ও সময় বিভাজন। অনার্স এর প্রত্যেক ইয়ারের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি নিবন্ধান। অনার্স ১ম, ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ বর্ষের অনেকে জিজ্ঞেস করেছেন ভাইয়া কীভাবে লিখলে সিজিপিএ ৩.০০ বা তার বেশী সিজিপিএ বা জিপিএ ভাল করতে পারব।
অনার্স ১ম বর্ষের অনেকে জিজ্ঞেস করেছেন ভাইয়া আমরাতো অনার্স প্রথম বর্ষ এইবার প্রথম পরীক্ষা দিব তাই পরীক্ষায় কিভাবে লিখব এবং ক,খ,গ এই তিনটি বিভাগ কিভাবে লেখা যায়।
ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তর লেখার কৌশল ও সময় বিভাজন:
- মোট পরীক্ষার মার্ক ১০০।
- ১০০ মার্কের মধ্যে মোট ৪০ পেলে পাশ।
অনার্স পরীক্ষা দুটি অংশে বিভক্ত:
- ৮০ মার্কের পরীক্ষা হবে।
- ৩২ পেলে পাশ।
- ২০ মার্ক ইনকোর্স পরীক্ষা যা আপনার কলেজের হাতে।
৮০ মার্ক পরীক্ষার মানবন্টন
- প্রশ্নের ৩টা ক্যাটাগরি থাকবে।
- ক বিভাগ ➖ অতি সংক্ষিপ্ত।
- খ বিভাগ ➖ সংক্ষিপ্ত।
- গ বিভাগ ➖ বর্ণনামুলক বা রচনামূক।
পরীক্ষার সময় ৪ ঘন্টা:
ক বিভাগে ১২টা থাকবে ১০টা দিতে হবে। প্রতি প্রশ্নের মান ১।
- ▶মার্ক ১×১০=১০
খ বিভাগে ৮টা থাকবে ৫টা দিতে হবে।
- প্রতি প্রশ্নের মান ৪।
- ▶মার্ক ৫ ×৪=২০
গ বিভাগে ৮টা প্রশ্ন থাকবে ৫টা দিতে হবে।
- প্রতি প্রশ্নের মান ১০
- ▶মার্ক ৫ ×১০=৫০
মোট মার্ক= ১০+২০+৫০=৮০
অনার্স পরীক্ষার খাতায় লেখার নিয়ম:
ক বিভাগের সংক্ষিপ্ত যেভাবে লিখবেন:
- অতি সংক্ষিপ্ত অর্থ এক কথায় উত্তর দাও।
- প্রশ্ন যা চাবে তাই দিবেন।
- উদাহরনঃ সমচ্ছেদ বিন্দু কী?
- উত্তরঃ যে পরিমাণ পন্য বিক্রয় করলে মোট বিক্রয় টাকা ও মোট ব্যয় সমান হয় তাকে বসমচ্ছে বিন্দু বলে।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন বারোটি থাকবে তার মধ্যে দশটি উত্তর দিতে হবে।
খ বিভাগের সংক্ষিপ্ত যেভাবে লিখবেন
- খ-বিভাগ যে আঙ্গিকে প্রশ্ন সাজানো থাকে। সাধারণত খ বিভাগ প্রশ্নে সংজ্ঞা লেখ, বুঝিয়ে লেখ, কী , কেন , কীভাবে ,কাকে বলে ,সংক্ষেপে লেখ ইত্যাদি।
- যেমন প্রশ্নের ক্যাটাগরি আছে; তেমন উত্তরের ক্যাটাগরি আছে।
- যদি কাকে বলে ,কী বা সংজ্ঞা টাইপের প্রশ্ন আসে তাহলে;
- শুরুতে ভূমিকা লিখতে হবে এবং বাধ্যতামূলক লিখতে হবে।
- ভূমিকা হবে একদম চমৎকার । যাতে টিচার দেখে খুব সহজেই বুঝতে পারে যে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন যা উল্লেখ থাকবে এর উত্তর সুন্দরভাবে লিখতে হবে।
- এরপর উপসংহার লিখে শেষ করবেন। আপনি যদি ভূমিকা উপসংহার না লিখেন তাহলে ফুল মার্ক কখন পাবেন না।
- সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন কত পেজ লিখলে ভালো হবে বা কত পেজ লিখবেন ?
- এই ধরনের প্রশ্ন আপনি কম করে হলেও দুটি পেজ লিখবেন ।বেশি লিখলে সমস্যা নাই। একটি কথা মনে রাখবেন পরীক্ষার সময়,সময় নষ্ট না করে সঠিক উত্তরটা লেখাটাই বেটার।
গ বিভাগের সংক্ষিপ্ত যেভাবে লিখবেন:
বর্ণনামূলক বা রচনামূলক: বর্ণনামূলকের ক্ষেত্রে ভূমিকা উপসংহার তো থাকবেই মাঝে মূল কথা লিখতে হবে। মূল কথাতে যদি পয়েন্ট থাকে তবে প্যারা আকারে লিখা যাবে।সব পয়েন্টের নাম্বারিং হবে। নাম্বারিং (ক) বা (১) এর ধারায় দিবেন ।পয়েন্টের নিচে আন্ডারলাইন থাকবে। কোনা কালার পেন ব্যবহার করে সময় নষ্ট করবেন না।
মাথায় রাখবেন মার্ক কিন্তু দশ। আপনি যতই ভালো লিখেন ১০ এ ১০ আপনাক দিবেনা। সর্বচ্চো ৯ বা ৮ ।
আপনার ভালো রেজাল্টের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা এই বিভাগের ! এই বিভাগে আপনার নুন্যতম ৩টা প্রশ্ন কমন রাখতে হবে এবং উত্তর সুন্দর ভাবে লিখতে হবে নয়তো রেজাল্ট ভালোবাসবে না। এই বিভাগকে বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা , ভূমিকা, প্রভাব, ইত্যাদি টাইপ প্রশ্ন থাকে। অনেক সময় দুই পার্টো থাকে।
যেমনঃ ব্যাংক ঋণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো:
- এই বিভাগের ভূমিকা একটু বড় রাখলে ভালো হয়। পাগলের মত শুধু লিখেই যাবেন তাহলে লাভ নাই। প্রশ্ন লেখার আগে বুঝবেন যে এই প্রশ্ন কত পয়েন্ট আছে ! যদি পয়েন্ট কম থাকে তবে আপনার পয়েন্টের সাইজ বড় হবে। আর পয়েন্ট অনেক থাকলে পয়েন্টের সাইজ ছোট হবে পয়েন্ট বেশি হবে। ১ম এর দিকের পয়েন্ট গুলা যাতে বই রিলেটেড থাকে। তবে প্রমাণ মূলক প্রশ্নে বানাতে তো পাবেন না। তাই যা উত্তর তাই দিতে হবে।
- ১ পৃষ্ঠায় ২টার বেশি পয়েন্ট রাখবেন না শুরুর দিকে। ১টা প্রশ্নে ভূমিকা উপসংহার বাদে কম করে ৮ থেকে ১০টা পয়েন্ট রাখবেন। বেশি রাখলে আপনার লাভ। বর্ণনামূলক প্রশ্নের আট থেকে দশ পেজ লিখলে ভালো হয় কম-বেশি করতে পারেন। আপনার ৫টা কমন থাকলে কথাই নাই।তবে ৩টা কমন লাগবে।যাতে খাতা দেখার সময় স্যার মনে করে স্টুডেন্ট ভালো। লেখার সাইজ মাঝারি থাকবে।লেখা বাজে থাকুক তবুও যাতে বুঝা যায়. .ধরা যায়।
অনার্স পরীক্ষার খাতায় লেখার সময় নির্ধারণ:
- কোন বিভাগ কত সময় নিব ?
- ১টা প্রশ্নে কত টাইম লাগবে ? সময় নিয়ে আলোচনার আগে কিছু কথা
- পরীক্ষার কেন্দ্রে ১ঘন্টা আগে যাবেন।
- ১৫ মিনিট আগে খাতা দিবে। কলেজে প্রতিদিন সীট পরিবর্তন হতে পারে ।
- রুমে প্রবেশের আগে জল যোগ ও বিষর্জন শেষ করে ঢুকবেন। সম্ভব হলে সাথে পানির বোতল রাখবেন।
- আপনাকে যে খাতা দেয়া হবে তাতে ১৩ টা পাতা থাকবে।
- ২৬টা পৃষ্ঠাতে মার্জিন দিবেন।
- বৃত্ত ভরাট, লেখা ও মার্জিন দিতে ১৫ মিনিট চলে যাবে। সময় অপচয় করবেন না।
সময় বিভাজনঃ নির্ধারিত সময় ৪ ঘন্টা।
- ক বিভাগ অতি সংক্ষিপ্ত ১০ মার্কের উত্তর ও প্রশ্ন হাতে পেয়ে পড়া ২০ মিনিট।
যেটা কমন পড়বে লিখে দিবেন। যেটা পরবেনা সেটা ফাঁকা রেখে এগিয়ে যান। - খ বিভাগ সংক্ষিপ্ত ৪ মার্কের প্রতি প্রশ্নের উত্তর ১৫ মিনিটে শেষ করতে চেষ্টা করবেন। তবে বেশিও লাগবে ।
- ৮০ মিনিটে এই বিভাগ ছেড়ে দিতে চেষ্টা করবেন।
- গ বিভাগ রচনা মূলক ১০ মার্কের উত্তর ২৫ মিনিট লাগাবেন। একটু কম বেশি হবেই। ১টা প্রশ্নে সময় বেশি লাগলে পরেরটাতে কভার দিতে চেষ্টা করবেন। না হলে চরম ধরা খাবেন। বেশি পেচাতে যাবেন না। পেচালেই ধরা খাবেন। সময় গড়ে নিবেন ১৩০ মিনিট। ১০মিনিট অপচয়।
এই টার্গেট বা আপনার তৈরি করা টার্গেট মাথায় সেট রাখবেন। লক্ষ্য ভেদ করবে না তবে লক্ষ্যের পাশে লাগবে।
বিভাগ লেখার ধারাবাহিকতা:
ক , খ ও গ বিভাগ ধারাবাহিক ভাবেই লিখতে হবে এমন ধরাবাধা নিয়ম নাই। আদর্শ ধারাবাহিকতা নিয়ে আলোচন করছি এখন।
- প্রথমে ক বিভাগ
- তারপর গ বিভাগ
- তারপর খ বিভাগ
কারন খ বিভাগে ২০ মার্কের জন্য মাথা নষ্ট করে লাভ নাই। আপনি গ বিভাগ টেনেটুনে ৫টাই লিখে আসবেন । তারপর খ বিভাগে দিবেন। দেখবেন যাতে খাতা না ছিড়ে যায়।
প্রশ্নের উপরে লিখা থাকে প্রত্যেক বিভাগে ধারাবাহিক ভাবে লিখতে হবে। অর্থ হচ্ছে: আপনি ক বিভাগ শুরু করছেন ওটা শেষ করে অন্য বিভাগে যাবেন। এটার দুটা লিখে পরে ওটার দুটা লিখবেন তা হবে না। আপনি বিভাগের ভিতরে এলোমেলো করতে পারেন । ২ লিখে ৫ তারপর ১ এভাবে লিখতে পারেন। মনে রাখবেন: একবার ক, আবার খ , আবার গ এরকম লিখতে পারবেন না।
৬০ তুলতে হলে যে হিসাব মাথায় রাখবেন। ক বিভাগে ১০ এ ১০। গ বিভাগে জাতের কমন ৩টা প্রশ্নে গড়ে ৭ করে ২১ ।বাকী দুটাতে ধরেন ৭। ২১+৭= ২৮। খ বিভাগে যদি সংজ্ঞা টাইপ প্রশ্ন থাকে আর কারেক্ট লেখতে পারেন তবে ৩ দিবে। ৫ টা প্রশ্নে গড়ে ১২।
আমি একদম কম করে ধরেছি। আপনার উত্তরের মান ভালো হলে আপনাকে বেশি দিবে । এটা আপনি ধরে রাখবেন; আশা রাখবেন।
১০+২৮+১২=৫০+ ইনকোর্সে নুন্যতম ১০=৬০= ৩.০০ ।