পড়তে বসলেই ঘুম পায় ; মুক্তির উপায় কী? পড়তে বসলেই ঘুম পায়? কিছুদিন পরেই এক্সাম কিন্তু পড়তে পারছেন না। পড়তে বসলেই ঘুম পাচ্ছে। আপনার কাছে ঘুম ঠেকিয়ে রাখা কোয়ান্টাম মেকানিক্স বোঝার চেয়েও কঠিন মনে হয়।
না, এই সমস্যা শুধু আপনার একার না। অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই কোনো না কোনো সময়ে এই সমস্যা ফেস করতে হয়। আমি নিজেও পড়তে বসলে প্রায়ই ঘুম পায়। এই আর্টিকেলে আমার মতো ঘুম কাতুরেদের জন্য কিছু টিপস শেয়ার করব। আর্টিকেলটি মোটামুটি বড়ো, পড়ার ইচ্ছে না থাকলে আপনার মতো অলসদের আসলে সারাদিন ঘুমানো উচিত।
পড়তে বসলেই ঘুম পায় – মুক্তির উপায় কী?
পড়তে বসলেই যদি ঘুম পায় তাহলে-
১. Keep Moving
একটু ঘুম ঘুম ভাব এলেই পড়া ছেড়ে উঠে ১০ মিনিটের মতো হাটাহাটি করুন। এই হাটাহাটি আপনার ঘুম দূর করবে, এনার্জি বুস্টিং হবে, পড়া মনে রাখতে এবং পড়ার চাপের কারণে সৃষ্টি হওয়া anxiety দূর করতে সাহায্য করবে।
২০১৮ সালে প্রাইমারি থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি, সকল শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে পরিচালিত একটি স্টাডিতে দেখা যায়, বাহিরে ১০ মিনিট হাটার ফলে স্টুডেন্টসদের উল্লেখযোগ্য স্মৃতি শক্তি ইম্প্রুভ হয় এবং ম্যাথ-রিলেটেড প্রবলেম সলভিং দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
একটানা ৩০ থেকে ৫০ মিনিট পড়ার পরে ছোট্ট একটা বিরতি নিতে পারেন। বিরতির সময়ে হাটাহাটি, লাফালাফি কিংবা গান গাওয়া যাচ্ছেতাই করুন।
২. রিডিং রুমে পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করুন
আমাদের দেহে Circadian rhythm বলে একটা ব্যাপার আছে যা বায়োলজিকাল ক্লকের একটা অংশ। এই Circadian rhythm আলোর সাথে সম্পর্কিত, এর কারণেই রাতের অন্ধকারে আমাদের ঘুম পায় এবং দিনের আলোয় জেগে থাকি।
রিডিং রুমে পর্যাপ্ত আলো না থাকলে এই রিদম অনুযায়ী আপনার ঘুম পাওয়া স্বাভাবিক। অর্থাৎ স্বল্প আলোতে দ্রুত ঘুম আসবে। জেগে থাকতে হলে পর্যাপ্ত আলোর মাধ্যমে Circadian rhythm কে বোকা বানাতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখুন
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সব সময় একটা ঘুম ঘুম ভাব থাকে এবং পড়তে বসে ঘুমিয়ে পড়ার অন্যতম একটা কারণ এটা।
তাছাড়া পর্যাপ্ত না ঘুমালে শারীরিক এবং মানসিক অনেক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে স্মৃতি শক্তি লোপ পায়।
ঠিকঠাক ঘুম না হলে কী কী ক্ষতি হতে পারে এবং কীভাবে ভালো ঘুমানো যায় তা নিয়ে আমার আর্টিকেল আছে। কমেন্টে দিয়ে দিব।
৪. পড়তে বসার সময় বেশ আরাম করে বসা যাবে না
অনেকেই পড়তে বসার সময় একটু আরাম খুঁজেন। আধশোয়া বা শোয়া অবস্থায় ও পড়তে চান। এসব করা যাবে না। আমাদের জেগে থাকার সাথে Parasympathetic Nervous System জড়িত। আমরা যখন আরাম করে শুয়ে বা বসে পড়তে চাই, এই সিস্টেম তখন ধরে নেয় আমরা বিশ্রাম নিতে চাচ্ছি। ব্রেইন মামাও রেস্ট পেয়ে ঘুম পাইয়ে দিতে চায়।
জেগে থাকতে হলে স্ট্রেইট বসে পড়তে হবে, আরাম করা যাবে না এমনকি দরকার হলে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে।
২০১৪ সালে শুয়ে এবং বসে কাজ করার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের উদ্দেশ্য একটি গবেষণা করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, যারা শুয়ে কাজ করে ঘুম ঘুম ভাব তাদের মেমোরি পারফরম্যান্সে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে।
৫. আলাদা বেডরুম এবং রিডিং রুম থাকলে ভালো
যদি আপনার আলাদা রিডিং রুম থাকে তাহলে বেডরুমে পড়ার দরকার নেই। কারণ এতে ‘বিছানা দেখলেই শরীর কেমন কেমন করে আর শুইতে মন চায়’ এরকম ভাব চলে আসতে পারে।
যদি বেডরুমেই পড়তে হয় তাহলে পড়ার টেবিল এমনভাবে সেট আপ করুন যাতে পড়ার সময়ে বিছানায় সহসা চোখা না পড়ে। পড়াশোনা কঠিন কাজ, ব্রেইন বেচারা বিশ্রাম নিতে চাইতেই পারে!
৬. পর্যাপ্ত পানি পানের প্রতি জোর দিতে হবে
ক্লান্তি অনুভব করা বা ঘুম ঘুম ভাব হওয়া ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ। এজন্য পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করতে হবে।
এই ব্যাপারটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কেননা ডিহাইড্রেশন ব্রেইনে প্রভাব ফেলার কারণে কগনিটিভ ফাংশন ডিস্টার্বড হয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া ডিফিকাল্ট করতে পারে। ব্রেইনে অতিরিক্ত চাপ পড়লে দ্রুত ঘুম আসা স্বাভাবিক।
২০১০ সালের একটি রিভিউতে দেখা যায়, মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের ডিহাইড্রেশন আমাদের short-term memory, concentration, mathematical ability, alertness এবং perception এ ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সুতরাং পানি খান, ঘুম তাড়িয়ে বুদ্ধি বাঁচান।
৭. নিয়মমাফিক হেলদি খাবার খেতে হবে
শারীরিক এবং মানসিক দুই ধরনের পরিশ্রমেই আমাদের শরীরের ক্যালরি খরচ হয়। এই ক্যালরি আসে খাবার থেকে। আপনি যদি না খান তবে শক্তি পাবেন কোত্থেকে? শক্তি না থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে এবং বিশ্রাম নিতে মন চাইবে।
আবার একবারে বেশি করে না খেয়ে অল্প পরিমাণে কয়েকবার খাওয়া ভালো। খাবারে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকা লাগবে।
সারাদিন হাবিজাবি না খেয়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ ভালো খাবার খান।
কী কী খাবার ব্রেইনের জন্য ভালো এটা নিয়ে আমার আর্টিকেল আছে। কমেন্টে লিংক দিব, আগ্রহীরা পড়ে নিবেন।
৮. পড়ালেখায় কৌশলী হতে হবে
বই বা নোট নিয়ে গৎবাঁধা পদ্ধতিতে রিডিং পড়তে থাকলে বিরক্তি চলে আসবে এবং পড়তে মন চাইবে না। এটা পড়ার সময় ঘুম পাওয়ার অন্যতম কারণ। সুতরাং কিছু টেকনিক ফলো করতে হবে।
যেমন :
- পড়ার পাশাপাশি ম্যাপ, চিত্র, ডায়াগ্রাম বা চার্ট তৈরি করুন। অবশ্যই যা পড়ছেন তা নিয়ে।
- জোরে জোরে পড়ুন।
- Practice exercise
- নিজের মতো উদাহরণ তৈরি করে পড়ুন।
৯. সম্ভব হলে গ্রুপ স্টাডি করুন
ঘুম দূর হবে, পাশাপাশি নতুন কিছুও শিখতে পারবেন। গ্রুপ স্টাডি পছন্দ না হলে একা একা পড়ুন তবে সেক্ষেত্রে পরিবারের কেউ ফ্রি থাকলেতা কে পাশে রাখতে পারেন।
রেফারেন্স :
“How to Avoid Sleepiness While Studying: 9 Ways to Stay Awake” https://www.healthline.com/health/how-to-avoid-sleepiness-while-studying