পোস্টাল অপারেটর পদের কাজ, সুযোগ সুবিধা এবং পদোন্নতি। ডাক বিভাগের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পদ হল পোস্টাল অপারেটর, পোস্টাল অপারেটর পদ কে ডাক বিভাগের প্রাণ বলা হয়। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর ১৫ নম্বর গ্রেডের (৯৭০০-২৩৪৫০) টাকার স্কেলের সম্পুর্ণ সরকারি ও ১০০% রাজস্ব খাতের পদ হল পোস্টাল অপারেটর। চাকরি শেষে পেনশন, আনুতোষিক, এককালীন লাম্পগ্রান্ট এলএলও, জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড (GPF), কল্যান তহবিল সহ সকল সুযোগ সুবিধা আছে। পোস্টাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে সাফল্যের সাথে প্রিলিমিনারী ও এডভান্স ট্রেনিং শেষে ৩ বছর পর স্থায়ী করা হয়।
উচ্চমাধ্যমিক পাশে (যদিও সবাই মাস্টার্স শেষে এপ্লাই করেন) দেশে যতগুলো সরকারি চাকরি আছে তারমধ্যে বেতন স্কেল, আরামদায়ক, কাজের চাপ, নিজ এলাকায় পোস্টিং এই বিষয় গুলো বিবেচনায় নিলে পোস্টাল অপারেটর পদ সবার উপরে।
পোস্টাল অপারেটর পদের কাজ, সুযোগ সুবিধা এবং পদোন্নতি
পোস্টিং ও কাজের ধরনঃ
একজন পোস্টাল অপারেটর পদের কর্মচারীকে বিভাগীয় অফিস, জেনারেল পোস্ট অফিস(GPO), এ গ্রেড জেলা প্রধান ডাকঘর(HO), বি গ্রেড জেলা প্রধান ডাকঘর(HO) উপজেলা পোস্ট অফিস(UPO), সাব পোস্ট অফিস(SO) এর মধ্যে যে কোন অফিসে পোস্টিং দেওয়া হবে। নিজ এলাকায় পোস্টিং নিয়ে ফ্যামিলি দেখাশুনার পাশাপাশি অফিস করতে পারবেন। ৩ বছর টেনিউর পূর্তির পর এক অফিস থেকে অন্য অফিসে বদলী করা হয়। সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত অফিস সময়। দুপুর ১:১৫ থেকে ২:০০ পর্যন্ত নামাজ ও খাওয়ার বিরতি।
জেলা প্রধান ডাকঘরে পোস্টিং হলে কাজের ধরন:
প্রতিটি এ গ্রেড জেলা প্রধান ডাকঘরে ১৫ থেকে ৮৫ জন, এবং বি গ্রেড জেলা প্রধান ডাকঘরে ৫ থেকে ২৫ জন পোস্টাল অপারেটর পদের কর্মচারী থাকে। একেক জন কর্মচারী একেক শাখায় কাজ করেন। একজন পোস্টাল অপারেটর পদের কর্মচারীর নিচের যেকোনো শাখায় পোস্টিং হতে পারে৷ যে শাখায় পোস্টিং হবে সেই শাখার কাজ করতে হবে। ছোট অফিস হলে একসাথে দুই তিনটা শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১। রেজিষ্ট্রেশন শাখা: এইশাখার কাজ হল কাউন্টারে বসে সাধারন গ্রাহকের চিঠিপত্র বারকোড দিয়ে POS মেশিনের মাধ্যমে ইস্যু ও রেজিষ্ট্রেশন করা, তালিকা তৈরী করে সেগুলো ডাক গাড়িতে প্রেরণের জন্য প্রস্তুত করা, ডাক গাড়ী থেকে প্রাপ্তির পর চিঠিপত্র বাছায় করে সাব পোস্ট অফিস ও পোস্টম্যান কে বিলির জন্য দেওয়া।
২। জিইপি ও ইএমএস শাখা এই শাখার কাজ ও প্রায় একই ধরনের।
৩। পার্শেল ও ভিপি শাখা: গ্রাহক বা পরীক্ষা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ অথবা তার প্রতিনিধির কাছ থেকে পার্শেল, ভিপিপি বা পরীক্ষার খাতার প্যাকেট প্রাপ্তির পর তা ইস্যু করে ডাকগাড়ির মাধ্যমে গন্তব্য বা শিক্ষাবোর্ডে প্রেরন করা। বাংলাদেশের জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স সহ সকল পাব্লিক পরীক্ষার খাতা ডাক বিভাগের মাধ্যমে গ্রহণ করে শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করা হয়।
৪। মানি অর্ডার ও ইএমটিএস শাখা: গ্রাহকের সকল প্রকার টাকা মানি অর্ডার ইস্যু ও ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার করতে হয়। ডাক গাড়িতে আসা মানি অর্ডার গুলো বিলির জন্য পোস্টম্যানকে দিতে হয়।
৫। সঞ্চয় ব্যাংক শাখা: সঞ্চয় ব্যাংক সাধারন হিসাব, মেয়াদি হিসাব এর অনলাইনে নতুন একাউন্ট খোলা, টাকা জমা করা, মুনাফার হিসাব করা, গ্রাহককে টাকা প্রদান করা সাব অফিসে প্রেরণ করা সহ সকল কাজ করা। সঞ্চয় ব্যাংক শাখায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ট্রানজেকশন হয়।
৬। সঞ্চয়পত্র শাখা: অনলাইনে গ্রাহকের সঞ্চয়পত্র ইস্যু, মুনাফা প্রদান, ভাঙ্গানো, বদলী করা সহ সকল কাজ। সঞ্চয় পত্র শাখায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ট্রানজেকশন হয়
৭। সাব একাউন্ট শাখা: একটা প্রধান ডাকঘরের অধীনে অনেকগুলা উপজেলা পোস্ট অফিস, সাব পোস্ট অফিস ও শাখা পোস্ট অফিস থাকে, এই শাখার কাজ হল এই সব অফিসের আয় ব্যয় হিসাব রাখা ও সেই সব অফিসের ডাক প্রাপ্তি ও প্রেরণ করা।
পদোন্নতি :
পোস্টাল অপারেটর পদ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে।
- ১. পোস্টাল অপারেটর > সহকারী পোস্টমাস্টার(APM)/উপজেলা পোস্টমাস্টার (UPM) > ডেপুটি পোস্টমাস্টার(DPM)/বি গ্রেড পোস্টমাস্টার/জেলা পোস্টমাস্টার
- ২। পোস্টাল অপারেটর > পরিদর্শক(IPO) >সুপারিন্টেন্ডেন্ট> সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল(APMG)
- ৩। পোস্টাল অপারেটর> পিও হিসাবরক্ষক > জুনিয়র হিসাবরক্ষক> সিনিয়র হিসাবরক্ষক > একাউন্টস অফিসার।
উপরের ৩ টির মধ্যে যে কোনো এক বিভাগে পদোন্নতি নেওয়া যাবে।