১৭তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা প্রস্তুতি ২০২৩। পর্যায়ক্রমে সবার ভাইভা নেবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। গতবারের নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে ভাইভার প্রস্তুতি ও পরামর্শ নিয়েছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
স্কুল-২ দিয়ে ভাইভা শুরু, তাই আমার ভাইভা অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম।
আমার ভাইভা অভিজ্ঞতা
স্কুল-২(ভাইভা বোর্ড-১)
বেল বাজার সাথে সাথেই দরজা খুলে অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভিতরে গিয়ে সালাম দিলে আমাকে বসতে বললেন। আমি কাগজ পত্র দিয়ে চেয়ারে বসলাম।
স্যারঃ আপনি কোথায় থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেছেন?
আমিঃ মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার “বসুর ধুলজুড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়” থেকে।
স্যারঃ এটা কি সদরে?
আমিঃ না স্যার,এটা মহম্মদপুর উপজেলায়।
স্যারঃ আপনি কি অনার্স শেষ করেছেন?
আমিঃ জ্বি স্যার।
স্যারঃ কোন বিষয়ে অনার্স শেষ করেছেন?
আমিঃ প্রাণিবিজ্ঞান।
স্যারঃ বলেন তো,বাংলা সাহিত্যে এমন একটা কবিতা আছে যেটা সাহিত্য এবং প্রাণি দুটোর সাথেই মিল আছে?
আমিঃ একটু ভেবে বললাম,সরি স্যার জানা নাই।
স্যারঃ আচ্ছা, আপনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম শুনেছেন?
আমিঃ জ্বি স্যার শুনেছি।
স্যারঃ বলুনতো উঁনি কে?
আমিঃ স্যার উঁনি একজন সাহিত্যিক।
স্যারঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়েকটি উপন্যাসের নাম বলেন?
আমিঃ শেষের কবিতা,বৌ ঠাকুরানীর হাট,গোরা,চার অধ্যায়।
স্যারঃ তাঁর দুটি নাটকের নাম বলুন?
আমিঃ ডাকঘর,তাসের দেশ।
এইবার ম্যাডাম প্রশ্ন শুরু করলেন।
ম্যাডামঃ মানুষ মাত্রই ভুল,এর ইংরেজি অনুবাদ করেন?
আমিঃ To err is human.
ম্যাডামঃ দুর্নীতি আমাদের সমাজের একটি অভিশাপ, এর ইংরেজি অনুবাদ করেন।
আমিঃ Corruption is The course for the Society.
ম্যাডামঃ আমাদের উচিত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে ভালোবাসা, এর ইংরেজি অনুবাদ করেন।
আমিঃ We should love our motherland. ম্যাডাম সন্তুষ্ট হলো না আমার উত্তরে,বললেন একটু স্নেহ করে বলতে।
ম্যাডামঃ আচ্ছা আপনি তো ছেলে মেয়েদের ইংরেজি পড়াবেন,প্রথমে কিভাবে পড়াবেন? গ্রামার পড়াবেন নাকি উদাহরণ দিয়ে শুরু করবেন?
আমিঃ আমি প্রথমে তাদেরকে ইংরেজি শেখার গুরুত্ব শিখাবো ,তারপন উদাহরণ দিয়ে গ্রামার শুরু করবো।
ম্যাডামঃ অনেক সুন্দর, ধন্যবাদ আপনাকে,আপনি এখন আসুন।
আমিঃ সালাম দিয়ে চলে আসলাম।
মোঃ মনিরুল ইসলাম
জুনিয়র শিক্ষক (১৭তম)
কাজলী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা।
শ্রীপুর,মাগুরা।
১৮তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা প্রস্তুতি ২০২৪
১৮তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা ২০ মাকর্সঃ
স্কুল, স্কুল-২ ও কলেজ—সব পর্যায়ের ভাইভায়ই মোট ২০ নম্বর। ভাইভার মার্কিং শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (১২) ও প্রশ্নের উত্তর (৮)—এই দুই অংশের ওপর। এ দুই অংশেই অন্তত ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। প্রার্থীর লিখিত ও ভাইভায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতেই জাতীয় মেধাতালিকা করবে এনটিআরসিএ।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা বোর্ডের অভিজ্ঞতাঃ
এনটিআরসিএ কার্যালয়ে আমাদের ভাইভা দেওয়ার সময় ২০টি বোর্ড বসেছিল। এর একটিতে আমার ভাইভা হয়। আমার বোর্ডে চারজন ছিলেন। একজন আমার সামনে, দুজন দুই পাশে। চার-পাঁচ মিনিটের মতো ছিলাম, সব প্রশ্ন তাঁরাই করেছেন। আরেকজন আমার পাশে ছিলেন, তিনি শুধু আমার সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র দেখে মার্কিং করেছেন।’ নিবন্ধন পরীক্ষায় যেহেতু প্রার্থীদের পছন্দক্রমে ‘বিষয়’ নির্ধারিত থাকে, তাই বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নই বেশি করা হয়। এ ছাড়া প্রার্থীর নিজ জেলা, উপজেলা, এমনকি নিজের সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়। ভাইভা বোর্ডে সাধারণত সরকারি কলেজের অধ্যাপকরা থাকেন।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা কার কেমন পোশাক-আশাকঃ
৬৪তম নিবন্ধনে স্কুল পর্যায়ে টেকা সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) মো. সোহেল কাজী বলেন, ‘ভাইভার জন্য ফরমাল পোশাক বেছে নেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। ছেলেরা সাদা ফুলশার্ট পরতে পারেন। সাদার ওপর যেকোনো স্ট্রাইপ হলেও চলবে। শুধু সাদাই যে পরতে হবে, ব্যাপারটা এমন না।
দেখতে মানানসই এমন যেকোনো রঙের জুতসই শার্ট হলেই হলো। শার্টের সঙ্গে কালো রঙের ফরমাল প্যান্ট হলে দেখতে ভালো লাগবে। অন্য রঙের প্যান্ট পরলে যদি মানায়, সেটাও পরতে পারেন। ফরমাল হাতঘড়ি, জুতা ও প্যান্টের সঙ্গে মিল করে কালো বেল্ট পরুন।
পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে নেয় এমন জুতা পরুন। কিছু জুতা আছে দেখতে ভালো; কিন্তু খট খট আওয়াজ হয়, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। জুতা কালো ও রাবারের সোলযুক্ত হলে ভালো দেখাবে। টাই পরতেই হবে, এমন না। যদি পরেনও আয়নায় দেখেন—মানাচ্ছে কি না। আর যাঁরা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরতে চান তাঁদের সাদা রংটাই বেছে নিতে বলব। ভাইভার অল্প কয় দিন আগেই চুল ছোট করুন। ভাইভার দু-এক দিন আগে শেভ করে নিন।
মেয়েরা মার্জিত রঙের শাড়ি পরতে পারেন। চাইলে সালোয়ার-কামিজও পরতে পারেন। যা-ই পরবেন, যেন শালীন, মার্জিত রং ও ডিজাইনের হয়। কানের দুল, চেন পরলে তা যেন স্বাভাবিক মাপের হয়। চুল বেণি করে রাখবেন। শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে পায়ের জুতা মানিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়। হাই হিল না পরার পরামর্শ দেব। হালকা মেকআপ নিতে পারেন। মার্জিত রঙের হালকা লিপস্টিক দিতে পারেন। পকেটে কলম রাখতে ভুলবেন না।’
১৮তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভার প্রস্তুতিঃ
৬৪তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় কলেজ পর্যায়ে নিয়োগ পাওয়া দুর্গাপুর ডিগ্রি কলেজের (রাজশাহী) প্রভাষক মো. নজরুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘স্কুল, স্কুল-২, কলেজ—সব পর্যায়ের ভাইভায়ই প্রার্থীর নির্বাচিত বিষয়ের ওপর প্রশ্ন হয়। কলেজের প্রভাষক পদের ভাইভায় বেশির ভাগ প্রশ্ন হয় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বই থেকে। আর স্কুলের সহকারী শিক্ষক পদের ক্ষেত্রে প্রশ্ন করা হয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বই থেকে।
চাকরি পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়ানোর মতো অবস্থা আছে কি না, জ্ঞানের পরিধি কেমন—সেটাই যাচাই করা হয় ভাইভায়। এ জন্য আপনার পঠিত বিষয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বইগুলো থেকে বেশি বেশি প্রস্তুতি নিন। অনার্স পর্যায়ের বইগুলো থেকেও প্রশ্ন করা হতে পারে।
মূল কথা প্রার্থীর নির্বাচিত বিষয়ের ওপর বেসিক ঠিক রাখা। আবার কোনো কোনো প্রার্থীকে তাঁর বিষয়ের বাইরে অন্য বিষয় থেকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছে, এমন নজিরও আছে। তাই পঠিত বিষয় ছাড়াও ভাইভা প্রস্তুতির বই পড়তে হবে। এক্ষেত্রে ৪৫জন বিসিএস ক্যাডারের ‘ ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি ‘ বইটা পড়তে পারলে দারুণ কাজে দিবে।’
১৮তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভায় উতরানো টিপসঃ
ভাইভার শুরুতে সাধারণত নিজের সম্পর্কে বাংলা কিংবা ইংরেজিতে বলতে বলা হয়। তাই নিজের নাম-পরিচয়, কোথায় কোথায় পড়াশোনা করেছেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ফলাফল, পারিবারিক তথ্য (বাসায় কে কে আছেন, বাড়ি কোথায় ইত্যাদি) বাংলা ও ইংরেজিতে সুন্দর করে গুছিয়ে বলার চর্চা করুন। পারিবারিক বিষয়গুলো সংক্ষেপে শেষ করে বর্ণনার শেষ দিকে নিজের ভালো দিক বা গুণ, বাড়তি যোগ্যতা নিয়ে বলার চেষ্টা করুন।
- আপনার এবং আপনার মা-বাবার নামের অর্থ কী? আপনার নামের সঙ্গে কোনো বিখ্যাত বা কুখ্যাত ব্যক্তির নামের মিল থাকলে তাঁর জন্ম-মৃত্যু, কর্ম, অবদান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন।
- আপনার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও প্রশ্ন হতে পারে। বিখ্যাত কোনো ব্যক্তির নামের সঙ্গে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নাম থাকলে তার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিন।
- নিজ জেলা কিংবা উপজেলার বিখ্যাত স্থান, বিখ্যাত ব্যক্তি, নদীর নাম, পণ্য, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ঐতিহ্য সম্পর্কেও প্রশ্ন হতে পারে।
- আপনার জেলার মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যত বেশি সম্ভব জানুন।
- যেদিন ভাইভা সেদিনের বাংলা ও আরবি তারিখ জেনে যাবেন। ভাইভার দিন বা কাছাকাছি কোনো দিন বিশেষ দিবস থাকলে সে দিবসের ইতিহাস জেনে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
- ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে।
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বর্তমান সরকারের সফলতা ও অর্জন সম্পর্কে পড়াশোনা করুন।
- শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য, বিভিন্ন প্রকল্প, শিক্ষার হার সম্পর্কে ঠিকঠাক ধারণা রাখতে হবে। এ ছাড়া উপবৃত্তি, মন্ত্রী ও সচিবের নাম জেনে রাখতে হবে।
- সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্প, ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১, এসডিজি, এমডিজি সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারলে ভালো হয়।
- নিয়মিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকা পড়ুন। গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি, পুরস্কার নোট করে রাখুন।
১৮তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা শেষেঃ
সব প্রার্থীর ভাইভা শেষ হওয়ার কিছুদিন পর চূড়ান্ত ফল—অর্থাৎ বিষয়ভিত্তিক জাতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। পাস করা প্রার্থীদের ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন’ সনদ দেওয়া হয়। এরপর জেলা, উপজেলা পর্যায়ে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ শূন্য আছে, সেগুলোতে সনদপ্রাপ্তরা আবেদন করতে পারেন। আবেদনের পর মেধাতালিকার ভিত্তিতে প্রার্থীদের পছন্দক্রম (স্কুল/কলেজ) অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৮তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা করণীয় বর্জনীয়ঃ
ভাইভা বোর্ডে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে ১৪তম নিবন্ধনে তালিকাভুক্ত শিক্ষক মো. সোহেল কাজী পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘বোর্ডে প্রবেশের সময় নিজস্ব ধর্মীয় রীতিতে অভিবাদন জানাবেন। ভেতরে প্রবেশের পর বসতে বললে ধন্যবাদ দিয়ে বসবেন। বসার সময় খেয়াল রাখবেন যেন চেয়ারে শব্দ না হয়। বসতে না বললে দাঁড়িয়ে থাকবেন। আপনার কাগজপত্রের ফাইলগুলো হাতে রাখবেন, ভুলেও টেবিলের ওপর রাখবেন না।
ভাইভা বোর্ড হলো বিনয়ের মঞ্চ, তাই যথাসম্ভব বিনয় দেখাবেন, তর্কে যাবেন না। আই কন্টাক্ট ঠিক রাখবেন। হাসি না এলেও হাসি হাসি ভাব ধরে রাখুন। কোনো বিষয়ে না পারলে বিনয়ের সঙ্গে দুঃখিত/মনে পড়ছে না/জানি না স্যার বলবেন। অপ্রাসঙ্গিক কথা না বলাই শ্রেয়। সরকার, মুক্তিযুদ্ধ, কোনো ধর্ম বা জাতি-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলা থেকে বিরত থাকবেন। কথা বলার সময় আঞ্চলিকতা পরিহার করে মার্জিত ভাষায় বলবেন। ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর দেবেন আর বাংলায় প্রশ্ন করলে বাংলায় উত্তর দেবেন। ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে বাংলায় উত্তর দিতে চাইলে অনুমতি নিয়ে বাংলায় উত্তর দেবেন।
দৈনিক কালের কণ্ঠ / চাকরি আছে