যাদের মেধা আর যত্নের উপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষাজীবনের ভিত্তি। সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নেই কোন ক্যারিয়ার পাথ। শিক্ষাবিদ বলছেন, বেতন বৈষম্যের সঙ্গে এমন আটকে পড়া কর্মজীবন মেধাবীদের এ পেশায় উৎসাহিত করতে বা ধরে রাখতে পারছে না। দেরি করে হলেও এ বিষয়ে ভাবতে শুরু করেছে বলে দাবি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের।
পরিশ্রম আর যোগ্যতার নিরিখে পদোন্নতিই চাকরিতে কর্মীর অনুপ্রেরণা যোগায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় সেই অনুপ্রেরণার বড়ই অভাব। পুরো কর্মজীবনে একজন সহকারী শিক্ষক হয়তো শুধুমাত্র জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক হতে পারেন। তবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের জন্য পদোন্নতি বলে কোন বিষয় নেই।
একজন শিক্ষক জানান, ২৬ বছর চাকরি করছি কিন্তু কোনো পদোন্নতি নেই। পদোন্নতি থাকলে মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার বেছে নিতো।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হলেও, এখনো পেশা হিসেবে আকর্ষণীয় নয় এটি। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) থেকে মেধাবীরা এখানে যোগদান করলেও, বেতন বৈষম্যের সঙ্গে এমন আটকে পড়া কর্মজীবন তাদের এ পেশায় ধরে রাখতে পারছে না।
শিক্ষাবিদ রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকদের ক্যারিয়ার পাথ বলে কিছু নেই। একজন শিক্ষক কেনো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্কুলে চাকরী করছেন, ক্যারিয়ার পাথ নিশ্চিত করে তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা উচিত।
যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের দাবি, ভবিষ্যতে শিক্ষকদের জন্য সামনে এগিয়ে যাবার পথ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. রামজান আলী জানান, আমরা নতুন একটি পরিকল্পনা তৈরি করছি। তাতে ক্যারিয়ার পাথ তৈরি হবে। প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা যোগ্যতার ভিত্তিতে উপজেলার শিক্ষা অফিসার হতে পারবেন।
প্রাথমিক শিক্ষাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার অনেক আগেই। এখন প্রয়োজন তার মান উন্নয়ন। সহকারী শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে যাতে ধাপে ধাপে পদোন্নতির মাধ্যমে, সেই গুণগত মান নিশ্চিত করা যায়, তারই কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।