সার্জেন্ট ভালো না এসআই ভালো। লেখাটা তাদের জন্য। পুলিশের এস আই বনাম সার্জেন্ট পার্থক্য কী? সার্জেন্ট ও সাব -ইনস্পেক্টর একই র্যাংকের। সমান বেতন। সমান সুবিধা। যার নিয়োগ আগে হবে সেই সিনিয়র। ধরেন একজন সার্জেন্টের নিয়োগ হয়েছে ২০১৫ সালে। আর আরেকজন এস আই এর নিয়োগ হয়েছে ২০১৪ সালে। তাহলে যোগদানের সময় অনুযায়ী এসআই সিনিয়র। এক্ষেত্রে সার্জেন্ট এসআই কে স্যার সম্ভোধন করবে। আবার এসআই যদি জুনিয়র ব্যাচের হয় তাহলে সার্জেন্টকে স্যার সম্ভোধন করবে। তবে কাছাকাছি ব্যাচের বেশিরভাগ সম বয়সী বা একই ক্লাসের হওয়ায় অনেকে ভাই/দাদা বলেও সম্ভোধন করে।
এটা নির্ভর করে ব্যক্তির উপর। স্যার বললেই কেউ ছোট হয়ে যায় না। সহজ কথা হল, এসআই সার্জেন্ট এক মায়ের দুই ভাই। যে আগে জন্মাবে সেই সিনিয়র। এটাই বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কৃতি। সিনিয়র ব্যাচকে স্যার বলতে হয়। সেটা যে র্যাংকেরই হোকনা কেন।
পুলিশের এস আই বনাম সার্জেন্ট পার্থক্য কী?
পুলিশ সার্জেন্ট এবং সাব-ইন্সপেক্টর পুলিশের মধ্যম সারির কর্মকর্তা। এই দুই র্যাংকের মর্যাদা একই রকম হলেও দায়িত্ব পালনে সাব-ইন্সপেক্টরদের কর্মপরিধি অনেক বেশি। সার্জেন্টের পোস্টিং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ট্রাফিক বিভাগে হয়ে থাকে অন্যদিকে এসআই’র পোস্টিং পুলিশের সকল ইউনিটেই হয়ে থাকে। তদন্ত ক্ষমতা থাকার ফলে এসআই’দের কার্যক্রম সব জায়গায়। তাই এদের প্যারাটাও অনেক বেশি। সার্জেন্ট যদি ধর্ম মন্ত্রণালয় হয় তাহলে এসআই হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সার্জেন্ট এবং এস আই’র কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে।
ক) পুলিশে একমাত্র সার্জেন্ট র্যাংকে শতভাগ সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়। কেউ চাইলে কনস্টেবল থেকে প্রমোশন পেয়ে সার্জেন্ট হতে পারবে না। সার্জেন্ট হতে হলে কম পক্ষে স্নাতক পাশ করতে হবে। অন্যদিকে এস আই’র ক্ষেত্রে সরাসরি নিয়োগের পাশাপাশি পদোন্নতির মাধ্যমেও একজন কনস্টেবল এসআই হতে পারবে তার যোগ্যতার ভিত্তিতে।
খ) সার্জেন্টের সর্বনিম্ন উচ্চতা ৫’৮” এবং এস আই’র সর্বনিম্ন উচ্চতা ৫’৬”। প্রমোশনের পর সার্জেন্ট হয় টি আই(পুলিশ পরিদর্শক শহর ও মোটরযান) আর এসআই হয় পুলিশ পরিদর্শক(নিরস্ত্র)। ইনস্পেক্টর হওয়ার পর এসআই রা থানার ওসি হতে পারে। কিন্তু সার্জেন্টরা পারে না।
গ) এসআই দের পোস্টিং সবক্ষেত্রেই হয়। অন্যদিকে সার্জেন্টের পোস্টিং বেশিরভাগই ট্রাফিক বিভাগে হয়ে থাকে। তাছাড়া হাইওয়ে পুলিশেও সার্জেন্টের পোস্টিং হয়। সার্জেন্টদের পোস্টিং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শহর কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। এসআই দের পোস্টিং দেশের যেকোনো জায়গায় হতে পারে৷
ঘ) পুলিশের এএসপি ও সার্জেন্ট দুইটি র্যাংকের ট্রেনিং ইন সার্ভিস। তারা ট্রেনিং থেকেই বেতন ভাতা পায় । কিন্তু এসআই এবং কনস্টেবল বিনা বেতনে ট্রেনিং করে৷ ট্রেনিং শেষে তারা বেতন ভাতা পায়। ট্রেনিংয়ের সময় এসআই দের বহিরাগত ক্যাডেট বলা হয়ে থাকে৷ বেতন ছাড়া একবছর ট্রেনিং আমার কাছে খুব অমানবিক মনে হয়। তাই এসআইদের ট্রেনিংয়ের সময় বেতন ভাতা দেওয়া উচিৎ।
তাই আপনারা যারা এসআই অথবা সার্জেন্ট হতে চান তারা বুঝেশুনে আসবেন। ব্যক্তিগত জীবনের কথা চিন্তা করলে সার্জেন্টের চাকরিটা অনেক ভালো। পরিবারকে সময় দেওয়া যায়। কিন্তু এসআই দের ব্যক্তিগত জীবন বলতে নাই বললেই চলে বিশেষ করে যারা থানা-ফাড়িতে চাকরি করে। ওয়ারেন্ট তামিল, আসামী ধরা, হল্লা ডিউটি, নাইট ডিউটি, মামলা তদন্ত, কেইস ডাইরী সহ অসংখ্য কাজ। তাই যারা আমার মতো আরামপ্রিয় তাদের জন্য সার্জেন্টের চাকরিটাই ভালো। সার্জেন্টে যতক্ষন ডিউটি ততক্ষনই প্যারা। এর পরে আর কেই খুজ নেয় না।
ব্যাক্তিগত মতামতঃ
সার্জেন্ট এবং এসআই আলাদাভাবে নিয়োগ না দিয়ে সবাই সার্জেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে এই পদ দুটিকে কম্বাইন্ড করা যেতে পারে। এতে করে এসআইদের বেতন ছাড়া ট্রেনিংয়ের যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে না। এদের মধ্যেই যারা ট্রাফিকে পোস্টিং পাবে তাদের সার্জেন্ট বলা হবে আর যাদের থানায় বা অন্যান্য ইউনিটে পোস্টিং হবে তাদের এসআই বলা হবে। তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে সার্জেন্ট পদটি থাকলেও এসআই নামে কোনো পদ নাই।
নোটঃ এখানে কাউকে ছোট বা বড় করা হয় নি। পুলিশের প্রতিটি র্যাংকই মর্যাদাপূর্ণ।