মোঃ সালাউদিন (রাব্বি) |
পুলিশ ক্যাডার (৩৪তম বিসিএস)
যারা জীবনে সপ্ন দেখেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এর গর্বিত সদস্য হবেন, বিসিএস এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য আমার এই চেষ্টা। বিসিএস এর প্রস্তুতি নেবার শুরুতে সবারই কিছু প্রশ্ন থাকে যেমন- কোথা থেকে শুরু করব? কিভাবে করব? কোন বই পড়ব? কোথায় কোচিং করব? কতক্ষণ পড়তে হয়? এত বিশাল পড়াশুনা, আমার দ্বারা কি হবে, আকি কি পারব? আরাও কত প্রশ্ন। এই প্রশ্নগুলো একসময় আমিও করতাম আমার পরিচিত বড়জনদের কাছে। তবে আমার দ্বারা হবেনা, তা আমি ভুলেও ভাবতাম না। আমি বিশ্বাস করতাম আমি চেষ্টা করলে পারব। বিসিএস এর পরীক্ষা ৩টা পর্বে ভাগ করা। ১ম প্রিলিমিনারী, ২য় লিখিত, ৩য় ভাইভা। যেকোন একটাতে খারাপ করা মানে বিসিএস থেকে ছিটকে পড়া। স্বপ্নগুলো হারিয়ে ফেলা। বিসিএস এর প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারী। বাংলা, ইংলিশ, গণিত, বিজ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান, নৈতিকতা ও ভূগোল এই বিষয়গুলোর উপর অনুষ্ঠিত হবে ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারী পরীক্ষা। প্রশ্ন হল কিভাবে ও কোথায় থেকে শুরু করব বিসিএস এর পড়াশোনা। মজার বিষয় হল আমরা কিন্তু এই প্রস্তুতি নিয়েছি আমাদের ১ম জীবন থেকে। মদনমোহন তর্কালংকার এর ‘আমার পণ’ কবিতাটি কোন ক্লাশে পড়েছিলাম আমার মনে আছে। প্রিলিমিনারী এর একটা প্রশ্ন হতে পারে আমার পণ অথবা এই কবিতার দুটি চরণ- ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারা দিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি’ এর লেখক কে?। তাছাড়া ৯ম-১০ম শ্রেণির ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইটা আমরা সবাই পড়েছি। বাংলা ব্যাকরণের জন্য এর চেয়ে ভাল বই আর হতে পারেনা। আর বিসিএস প্রিলিমিনারীতে যে গণিত আসতো- ৫ম-১০ম শ্রেণির গণিত, যা আমরা সবাই করেছি। সাধারণ বিজ্ঞানের অংশটুকু আমরা সবাই পড়েছি আমাদের স্কুল জীবনে, বিজ্ঞানে নতুন সংযোজন হল প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স- যা আমাদের সবারই পড়তে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আমাদের সবার ইংরেজি বাধ্যতামূলক ছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আমরা যেই ইংরেজি গ্রামার পড়েছি তাই যথেষ্ট। নতুন করে পড়তে হবে ইংরেজি সাহিত্য, বাড়াতে হবে শব্দভাণ্ডার। সাধারণ জ্ঞান, নৈতিকতা ও ভূগোল একেবারে আমাদের অজানা নয়। সাধারণ জ্ঞান এর অংশটুকু আমাদের একটু বিস্তারিত পড়তে হেব। ২০০ নাম্বার এর মাঝে সাধারণ জ্ঞান এর নাম্বার হল ৫০। ভয় পাওয়ার কিছু নাই, একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে বিসিএস প্রিলিমিনারী এর ভাল একটা অংশ আপনার পড়া আছে আপনার অজান্তে। প্রশ্ন হল অনেক আগে এইগুলি পড়েছি এখন কি আর মনে আছে? মনে না থাকারই কথা, এই জন্যই তো এখন এইগুলি পড়ে মনে করে নিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিষযগুলির উপর জোর দিতে হবে। বিসিএস প্রিলিমিনারী এর পড়াশোনা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়, অনেক বেশী পড়াশোনা- কিন্তু ভয় পাবার কিছু নেই। বাজারে প্রত্যেকটা বিষয়ের উপর আলাদা আলাদা বই আছে। আপনি বইগুলি কিনে পড়া শুরু করতে পারেন। তবে বই সিলেকশন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন বিষয়ের জন্য কোন কোম্পানির বই ভাল তা আপনি বড়দের (অভিজ্ঞদের) কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। আপনার কাছে যেইটা ভাল লাগবে সেই বিষয়টা দিয়ে শুরু করে নিতে পারেন। তবে গণিত অথবা ইংরেজিতে দুর্বল হলে এইখানে সময় বেশি দিতে হবে। কারণ এই দুইটা বিষয় দখলে আনতে অনেক সময় লাগে। নিজেরা গ্রুপ করে পড়বেন। বড়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। তাদের কাছ থেকে গাইডলাইন নেবেন। আমার একদিনের জন্যও কোচিংএ যাওয়ার দরকার পড়েনি। ক্যাডার হবার জন্য কোচিং জরুরি না, জরুরি হল আপনাকে পড়তে হবে। আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন আপনি কিভাবে পড়বেন। মনে রাখবেন সফল হওয়ার জন্য কোন শর্টকাট রাস্তা নাই। যেকোন বিষয় সম্পর্কে ভাল করে পড়বেন, যাতে সেই বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়। ফাঁকি দিয়ে পড়বেন তো প্রিলিমিনারি, লিখিত বা ভাইভা কোথাও গিয়ে আটকে যাবেন। কতক্ষণ পড়বেন- তা এক এক জনের জন্য এক এক রকম। যারা আমার মতো স্কুল জীবনে ফাঁকি দিয়ে এসেছেন তাদের পরিশ্রমটা একটু বেশি করতে হবে, সময় বেশি দিতে হবে। আর সবার সমান সময় লাগে না। কারও কম, কারও বেশি। তবে আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে বিসিএস এর পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো যতক্ষণ পড়লে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে, ততক্ষণ পড়তে হবে। দৈনিক ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যদি আপনি ভাবেন আপনার দ্বারা হবে না, তাহলে কখনও আপনার দ্বারা হবে না। বুকে সাহস রাখতে হবে, পরিশ্রম করার মানসিকতা তৈরি করুন। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি সঠিক প্ল্যান অনুসারে করতে হবে। মনে রাখবেন ‘বিজয়ীরা ভিন্ন কাজ করে না, তারা একই কাজ ভিন্নভাবে করে’। আপনাদের সাফল্য কামনা করি।বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে যেভাবে