চাকরির প্রস্তুতিমূলক পড়াশোনায় কিছুই বাদ দিইনি।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আব্দুল আউয়াল। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক(এডি) হয়েছেন। তার চাকরি পাওয়ার গল্প শুনেছেন- এম এম মুজাহিদ উদ্দীন।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় আমার বেড়ে উঠা। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম, কিন্তু সাহিত্যের প্রতি একটা টান অনুভব করতাম স্কুলজীবন থেকেই। সবাই যেখানে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখত, আমি সেখানে বাবার মতো শিক্ষক হতে চাইতাম। গত্বাঁধা কোনো কিছুই টানত না আমাকে, তাই ক্লাস পরীক্ষায় মন বসানো মুশকিল হয়ে যায়। উপরন্তু সেশনজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠি এবং গতানুগতিক ধারার ক্লাস পরীক্ষা থেকে মনোযোগ হারাই। ফলে ৩.৩৫ সিজিপিএ নিয়ে অনার্স শেষ করি।
সরকারী চাকরির প্রস্তুতি যেভাবে শুরু করবেন
ঢাকায় মেসে থাকতাম। টুকটাক টিউশনি করে সময় ভালোই কেটে যাচ্ছিল। শুধু একাডেমিক পড়াশোনায় আমার ক্যারিয়ার না-ও হতে পারে—ডিপার্টমেন্টের সিনিয়রদের দেখে এটা বুঝতে পারি। তাই একাডেমিক পড়ালেখার পরে চাকরির জন্যও টুকটাক পড়াশোনা শুরু করি। চাকরির বাজার কেমন তা পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে বোঝার চেষ্টা করি।
অনার্সের ফল হওয়ার পর পূবালী ব্যাংকের সার্কুলার ছিল বলে ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন বন্ধু সেখানে আবেদন করি এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের আশায় পরীক্ষা দিই। জীবনের প্রথম চাকরির পরীক্ষায় ভাইভার ডাক পেয়ে বেশ অবাক হয়ে যাই; কারণ তখন চাকরির প্রস্তুতি তো ছিলই না, চাকরির পড়ালেখা আর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন সম্পর্কেও আমার তেমন ধারণা ছিল না। জীবনের প্রথম চাকরির পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েও শেষ পর্যন্ত যোগদান করা হয়নি। কারণ মাস্টার্স চলছিল এবং পোস্টিং হয়েছিল দূরবর্তী এলাকায়।
বিসিএস বা অন্য কোনো চাকরির প্রতি কোনো বিশেষ ভালো লাগা না থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের প্রতি কিছুটা ভালো লাগা ছিল। তাই বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়ার সময় যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলো, তখন আর আলাদা করে পড়ার সুযোগ খুব বেশি হয়নি। প্রিলিমিনারির জন্য সব কিছু মিলিয়ে পড়েছি। চাকরির প্রস্তুতিতে আমি কখনোই কোনো কিছু ছেড়ে বা বাদ দিয়ে পড়ার পক্ষে ছিলাম না। এ জন্য ১০-১২টা ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতে আমি সহজেই উতরে যাই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের প্রিলিমিনারির জন্য গণিতের বিষয়বস্তুভিত্তিক বই কিনে সব সমস্যা সমাধান করতাম এবং মানসিক দক্ষতা সংশ্লিষ্ট বই থেকে বিগত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আসা সমস্যাগুলো সমাধান করতাম। প্রিলিমিনারির পাশাপাশি লিখিত, সঙ্গে ইংরেজি ভোকাবুলারির ওপর জোর দিয়েছি। সাধারণ জ্ঞানের জন্য পত্রিকার পাশাপাশি নতুন বিশ্ব (বই) পড়েছি এবং মাসের শুরুতেই কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স কিনে এক বসায় পড়ে ফেলতাম।
আমার মনে হয়েছে, প্রতিটি বিষয়ে একটু একটু করে না পড়ে একটানা পড়লে একটি বিষয়ে কংক্রিট আইডিয়া তৈরি হয়। প্রতিদিন বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়ার ফলে অনেক কিছুই সহজ হয়েছে আমার জন্য। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম বলে প্রচুর ইংরেজি পড়া হয়েছে। ইংরেজিতে ফ্রি হ্যান্ডরাইটিং এবং ব্যাকরণগত নির্ভুল বাক্য লেখার দক্ষতা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের লিখিত পরীক্ষায় ভালো অ্যাডভান্টেজ দিয়েছে আমাকে। বাংলার জন্য বোর্ডের ব্যাকরণ বইটি দেখতাম, সঙ্গে বাজারের গাইড পড়েছি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদেও প্রিলিমিনারির আগে ব্যাকরণের ওপর বেশি জোর দিয়েছি। কারক, সমাস, সন্ধি, বানানের শুদ্ধিকরণ বা বাংলা বানানের নিয়ম, বিভিন্ন ভাষা থেকে আগত শব্দ, পারিভাষিক শব্দ, প্রকৃতি-প্রত্যয়, খাতায় লিখে অনুশীলন করতাম। এ ছাড়া সাহিত্যের জন্য সৌমিত্র শেখরের বইটি সাজানো মনে হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখকদের লেখা পড়ার ঝোঁক ছোটবেলা থেকে থাকলেও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সাহিত্যিক এবং তাঁদের কী কী সাহিত্যকর্ম রয়েছে, বিশেষ মনোযোগ দিয়ে সেগুলো বারবার পড়তে হয়েছে।
এভাবে প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। বিসিএসে প্রত্যাশিত ফল না পেলেও ৩৭তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। তখন ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে ভাইভা দিয়েছিলাম। ভাইভা ভালো হওয়ায় চাকরির ব্যাপারে একটু বেশি আত্মবিশ্বাস ছিল। সহকারী পরিচালক পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হই এবং ব্যাংকার হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করি।
-দৈনিক কালের কণ্ঠ / চাকরি আছে
©এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
লেখক : ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি,
ব্যাংকার’স ভাইভা বোর্ড।