দিন শেষে আমরাই জাতীয় বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। হাজার হাজার ব্যর্থতা, হতাশা, তিক্ততার আবাস স্থান। পাবলিকে একটুকের জন্য হলো না, মেডিক্যাল মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারিং করার আশাটাও শেষ। স্বপ্নগুলা যখন মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামক একটা পরিবার সেই হাজার হাজার ভাঙ্গা স্বপ্ন, আহত মনকে আশ্রয় দেয়।
কেউ অর্থের জন্য আবার কেউবা ভাগ্যের জন্য নিজ ইচ্ছাটাকে মাটি চাপা দিয়ে জীবন যুদ্ধের জন্য নেমে পরে। হ্যাঁ! আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারে একটা অংশ। আমরা পাবলিক, প্রাইভেটের মত অন্যদের সাথে তুলনা করতে পারি না। তাই বলে আমরা খারাপ না।
আমাদের মাঝেও ভালো আছে। শুধু মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি আমাদের খারাপ করে দিয়েছে। জাতীয় থেকেও প্রতি বছর বিসিএস বের হয়, জাতীয় থেকেও জর্জ, ব্যারিস্টার হয়, জাতীয় থেকে উকিল, পুলিশ হওয়া যায়। সমস্যাটা আমাদের। আমরা হতে চাইনা বা চেষ্টা করি না। করবোই বা কিভাবে ? আমরাতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।আমারাতো অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করতে পারি না।
তবুও আমাদের জীবন অনেক মজার হয়। পাবলিক বা প্রাইভেটের মত আমাদের বাধ্যতামূলক ক্লাস করতে হয় না। ক্যাম্পাস গেলেই গলা ছেড়ে গান। বটতালার নিচে একদল জোট বেধে চুটিয়ে আড্ডা দেয়। তাদের মধ্যে সকলের আর্থিক অবস্থা এক না। তবুও সবার পোশাক দেখে বোঝা যাবে না। এরা যথেষ্ট স্মার্ট। জাতীয়তে যে মিল বন্ধন পাওয়া যায় বা গড়ে ওঠে তা আপনি পাবলিকে পেলেও প্রাইভেটে পাবেন না।
জাঃবিঃ এর ফ্রেন্ডশীপটা অনেক দারুন হয়।বন্ধু বান্ধবীদের মিলটা অনেক গভীর থাকে।আপনি ছাত্রীনিবাসের সামনে মাঝে মাঝে কিছু ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেব। হাতে কিছু না কিছু থাকবেই। ওটা বেষ্টুর জন্য। নিশ্চই কল করে তেল মেখে তাকে কিছু আনতে বলছে। ওটা নিয়েই বলবে যাহ ফইন্নি. . .ভাগ এইহান থেইক্কা ! হেহে বন্ধুত্ব।
লেট নাইট খোলা মাঠে বার্থডে সেলিব্রেট করে মেস অব্দি রেখে আসবে। হুট হাট একদিন এক পট নুডলস রান্না করে এনে দিয়ে বলবে নে খা শালা। আগেতো খাইস নাই। বেশি বেশি করে খা। হঠাৎ এটা সেটা রান্না করে আপনাকে সারপ্রাইজ করে দিবে।মাঝ রাতে কল করে বলবে দোস্ত ঘুমাইছিস!
এদিকে পড়ার কোনো তাড়া নেই। না আছে সীটের দরকার। আর থাকবেই বা কেন ? গ্রুপের কেউ একজনের কাছেতো এগুলা আছেই। পরীক্ষার আগের রাতে আপনাকে কল করে বলবে শালা সীট দে ! আমার বই নাই। মামা পুরাই ফেল করমু। বাঁচা মামা ! আপনার ব্যর্থতা এদের মাঝে মিশে যাবে।আপনি নতুন কিছু করার স্বপ্ন পাবেন। আরো মজা হয় ক্যাম্পাসে উৎসবের দিন। পাবলিকের মত বড় স্টেজ করতে পারি না কিন্তু ছোট তেই অনেক মজা করি। মেচিং শাড়ি, পাঞ্জাবি পড়ে পুরা ক্যাম্পাস ঘুরা,হৈ হুল্লর চলছেই।
পাবলিক বা প্রাইভেটের মত আমাদের গাড়ি আসে না নিতে। ঐ বাসে,বা অটো বা রিকসায় যেতে হয়। আর ভাড়া ঠিক কররা ব্যাপারটা ? এটা মেয়েদের ওপর ছেড়ে দিয়েই দেখেননা একবার। জাঃবিঃ স্টুডেন্টস পারে নিজের ডিপার্টমেন্ট, কলেজ ছেড়ে অন্যের ডিপার্টমেন্ট, কলেজে ক্লাশ করতে।নযা আর কেউ পারে না।
হাসি- কান্না, সুখ -দুঃখ আমার ভাগাভগী করে নেই। শুধু পড়া লেখা নয়, অনেকে জব ও সংসার চালায়। যা পাবলিক ও প্রাইভেট কম পাবেন। টিউশনি করিয়ে জাতীয় স্টুডেন্টরা ভাইয়া টাইটেল পেয়ে যায়। তবে এরা আবার ক্রাশও খাওয়াতে পটু। নিজে পারে নাই পাবলিকে। তাতে কি তার কত ছাত্র ছাত্রী আছে পাবলিকে। তারাতো এখন মানুষ গড়ার কারিগর।পরিক্ষার আগে সীট খুজে দেয়ার কাজ আপনি জাতীয় বিশ্বঃ এ পাবেন।
যেখানে পাবলিকে নতুন জুনিয়রদের র্যাগ দেয়ার মত মজা করে সেখানে জাঃবিঃ ক্রাশ খায়। দোস্ত ঐ দেখে ঐ যে হলুদ ওড়নাটা।ঐটা তোর ভাবী। দেখে রাখিস কিন্তু। এভাবে সেভাবে কেটে ৪টা বছর পার করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাার্থী ।সেখানে পাবলিকিয়ানরা বই ঘেটে পাগল। চারটা বছর পর প্রিয় মুখ গুলার মায়া ত্যাগ করে জীবনের জন্য জীবন যুদ্ধে নামতে হয়।অনেক কষ্টের চোট সামলিয়ে ৪টা বছর পর নিজেকে সামলিয়ে নিতে শিখে যায় জাঃবিঃ এর স্টুডেন্টস।
ঐ ক্ষত পূরণের জন্য চলে অবিরাম পরিশ্রম। বেলা শেষে প্রিয় মুখগুলার কথা মনে পরে যায়। মিল বন্ধনে দৃঢ়তা যেন জমে বসে থাকে। সমাজকে জবাব দিতে ৪টা বছর অপেক্ষা করতে হয়। কেউবা বিসিএস ক্যাডার, কেউবা বাবার ব্যবসা, কেউবা সংসার, কেউবা বেকারত্বের অভিশাপে মোড়ানো থাকে।
আমরা পারি সমাজকে তাক লাগতে ৪টা বছর আমাদের কত কিছু দেয়। কতটাই না মায়ার জালে জড়িয়ে ফেলে।যার জন্য আমরা কাঁদতে বাধ্য হই। আজ লেখার সময় আমি (সিফাত) কাঁদলাম।কোনো একদিন কারো লেখা পড়ে কাঁদবো। উপসংহার হিসেবে আমাদের বলা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা ছাত্রী। যা আমাদের মাথা উচু করিয়ে বাঁচতে শিখায়। ইজি চেয়ারে বসে মনে করিয়ে দেয় স্মরণীয় চারটা বছর। মায়া মাখা মুখ,গিটারের সুর তোলা সেই ক্যাম্পাসে গাওয়া গান।