বিসিএস প্রস্তুতি নির্দেশনা লিখেছেনঃ নাজমুল হাসান ৩৮ তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত ক্যাডার( শিক্ষা)
আপনি যদি এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে আপনি ৪৩/৪৪ তম বিসিএস এ অংশ গ্রহণ করবেন, তাহলে একটু সময় নিয়ে লেখাটি পড়ুন। কাউকে পরামর্শ দেওয়ার মতো এতো যোগ্যতা আমার নেই। এক ভাই অনুরোধ করেছে, তার জন্য এই আয়োজন। ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলুন।
বিশ্বাস রাখুন যে বিসিএস কিংবা অন্যান্য সরকারি চাকরি পাওয়াটা এমন আহামরি কিছুই না। একটু সময় নিয়ে আর পদ্ধতিগতভাবে পড়াশোনা করলে বাংলাদেশে একটা চাকরি পাওয়া খুব একটা কঠিন না।
এক্ষেত্রে যে কাজ গুলো আপনি শুরু করতে পারেন:
১) বিগত বছরের বিসিএস প্রশ্ন ব্যাংক কিনে বুঝে বুঝে পড়ুন। দরকার হলে নোট করে রাখুন।
২) রিসেন্ট জব সলুশন কিনুন, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নোট করে করে পড়ুন।
৩) নবম দশম শ্রেণীর বোর্ড বই গুলো ভালো করে পড়ুন। বিশেষ করে অঙ্ক, ইংরেজি, সাধারণ বিজ্ঞান ও বাংলা বোর্ড বই গুলো বুঝে বুঝে পড়ুন। প্রিলির জন্য উচ্চ মাধ্যমিকের বই খুব একটা দরকার নেই। তবে বাংলাদেশ বিষয়াবলীর জন্য উচ্চ মাধ্যমিকের মোজাম্মেল হকের পৌরনীতি দ্বিতীয় পত্র পড়তে পারেন, অনেক কাজে দিবে।
৪) যারা প্রিলির সাথে রিটেনের কিছু বিষয় পড়ে ফেলতে চান, তারা নবম দশম শ্রেণীর উচ্চতর গণিত, উচ্চ মাধ্যমিকের আইসিটি, পৌরনীতি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (মোজাম্মেল হক), বিসিএস এসুরেন্স বাংলা লিখিত গাইড, ওরাকল বিজ্ঞান লিখিত গাইড, ওরাকল রিটেন মেন্টাল এবিলিটি, উচ্চ মাধ্যমিকের চৌধুরী এন্ড হোসাইনের এডভান্স ইংলিশ গ্ৰামার, ইত্যাদি বই গুলো সংগ্রহে রাখতে পারেন।
৫) সার্বিকভাবে – ইংরেজির জন্য- Higher English Grammar by PK DC Sharkar, Common Mistake by TJ Fidkedj, Competitive Exam by Fazlul Haque
অঙ্কের জন্য- সাইফুরস ম্যাথ, খাইরুল ম্যাথ, আগারওয়াল ম্যাথ (যে কোন একটা দিয়ে শুরু করুন)
কম্পিউটার ও বিজ্ঞানের জন্য- ডা. জামিলস বিজ্ঞান, ইজি কম্পিউটার
বাংলা সাহিত্যের জন্য- হুমায়ূন আজাদের লাল নীল দীপাবলি, কতো নদী সরোবর, এসুরেন্স রিটেন + যে কোন একটা প্রিলির ভালো গাইড।
বাংলা ব্যাকরণের জন্য- নবম দশম শ্রেণীর মুনীর চৌধুরীর বাংলা ব্যাকরণ, হায়াত মাহমুদের বাংলা ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর জন্য- উচ্চ মাধ্যমিকের পৌরনীতি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (মোজাম্মেল হকের), বাংলাদেশ সংবিধান, প্রফেসরস গাইড + পত্র পত্রিকা, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, এসুরেন্স প্রিলি আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী, ওরাকল প্রিলি আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী।
ভূগোল ও পরিবেশ এবং নৈতিকতা মূল্যবোধ ও সুশাসনের জন্য – প্রচলিত যে কোন একটা ভালো গাইড
এই বই গুলো পড়তে পারেন।
৬) এসুরেন্স/কনফিডেন্স/ জ্ঞানদ্বীপ (অন্তত যে কোন দুইটা) প্রকাশনীর মডেল টেস্ট বই কিনুন। প্রতিদিন/প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৪-৫ টা মডেল টেস্ট সর্বোচ্চ সিরিয়াস হয়ে ১:৩০ মিনিটের মধ্যে দিয়ে নিজে যাচাই করুন।
৭) বাজারে শিক্ষনীয় কিছু মানচিত্র পাওয়া যায়। কিনে বাসায় টানিয়ে রাখুন। সময় পেলেই মানচিত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য/স্থান এগুলো বের করতে শিখুন।
৮) বিখ্যাত লেখকদের আলোচিত বইগুলো পড়তে শুরু করেন। একি সাথে আলোচিত কিছু কবিতা, স্বাধীন বাংলা বেতারের গান, দেশাত্মবোধক গান, কিছু কিছু মুখস্থ করে ফেলুন।
৯) বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক, জাতীয় চার নেতা, দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ
(সাহিত্য+রাজনৈতিক+অন্যান্য), সরকারের সফলতা, প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত অর্জন ইত্যাদি বিষয়ে এক চুল-ও ছাড় দেয়া যাবে না।
১০) সংবিধান, SDG, ভিশন ২০২১, ২০৪১, ডেলটা প্ল্যান-২১০০, ব্লু ইকোনমি, পদ্মা সেতু, প্রধানমন্ত্রীর দশটি ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প, পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, NEC, ECNEC, Parliament, Cabinet, Council of Minister, Role of Prime Minister, President, Chief Justice, Speaker, Principal Secretary, cabinet secretary, SDG বিষয়ক সমন্বয়কারী সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও তাদের দায়িত্ব, সাংবাদিক পদ ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও তাদের দায়িত্ব, Bangladesh bank, Bangladesh judicial system, Warrant of Precedence, Rules of business, Allocation of business, Rules of procedure, দেশের অর্থ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, জাতীয় বাজেট, আদমশুমারি, খানা আয়-ব্যয় জরীপ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের অর্জন, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, দেশের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার, সমাজ ও সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে জানতে হবে।
এবার আসি কিছু ফিলোসফিক্যাল কথা বার্তায়:
১. আপনি যদি শুধু প্রিলি পাস করতে চান তাহলে ধুমিয়ে পড়েন, আর যদি ভাইবা পর্যন্ত যেতে চান তো বুঝে বুঝে পড়ুন।
২. আপনি যদি ভাইবা পর্যন্ত যেতে চান তো বুঝে বুঝে পড়ুন, আর যদি চাকরিটা পেতে চান তো বুঝিয়ে বুঝিয়ে পড়ুন। (কেউ না থাকলে নিজেই নিজেকে বুঝান)
৩. গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নোট করে রাখার অভ্যাস না থাকলে বিসিএস এ সফল হওয়া বেশ কঠিন।
৪. মানসিক এবং শারীরিকভাবে প্রচন্ড সক্ষমতা না থাকলে আপনার বিসিএস ছাড়া অন্যান্য জবের চেষ্টা করাই ভালো।
৫. এক বসায় অন্তত ৫-৬ ঘন্টা পড়তে না পারলে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার কিছুই পড়া হয়নি। সুতরাং আবার প্রথম থেকে শুরু করুন।
***Imagination is more powerful than knowledge, আইনস্টাইনের এই উক্তির মর্মার্থ বুঝতে চেষ্টা করুন। অন্তত বিসিএস-এ এর কোন হের-ফের হবে না।
পরামর্শ/মোটিভেশন/ফেসবুক– এসব থেকে দূরে থেকে পড়ার টেবিলে বেশি থাকুন। নিজের পিতা মাতার চেয়ে বড় কোন মোটিভেশন আর হয়না– এটা বিশ্বাস করতে শিখুন।
হাতের লেখা সুন্দর নয়- সুতরাং আমার কিছু হবে না— এই ধারণা ভুলে যান। মোটামুটি বোঝা গেলেই হলো। তবে দ্রুত লেখার অভ্যাস করুন।
তথ্য উপাত্ত দিয়ে লিখতে পারলে ভালো, না পারলে অন্তত মৌলিক বিষয় ঠিক রেখে টুকটাক তথ্য উপাত্ত দিয়ে লিখুন। তবে চেষ্টা করুন যাতে সংবিধান, জাতীয় আন্তর্জাতিক আইন, অর্থনৈতিক সমীক্ষা এসব থেকে কম বেশি রেফারেন্স দেয়ার।
অঙ্ক, ইংরেজি, বিজ্ঞান, বাংলা ও ভাইবা- এই পাঁচ বিষয়ে ভালো নাম্বার আপনার চাকরি পাওয়া বা না পাওয়ার মাঝে পার্থক্য হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া যাবে না। (আমার কাছে ভাইবাও একটা বিষয়ের নাম, এবং এটার জন্যও অন্যান্য বিষয়ের মতো আপনাকে প্রতিদিন সময় বরাদ্দ করতে হবে)
নিজের কমন সেন্স, আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিত্বকে উন্নত করার চেষ্টা করুন। ভাইবাতে অনেক বেশি কাজে দিবে। এগুলোর জন্য প্রতিনিয়ত নিজের আত্মশুদ্ধি, আত্ম উপলব্ধি, চরিত্র নিষ্ঠা, খারাপ সঙ্গ ত্যাগ, উপযুক্ত পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি, মৌলিক বই পড়া, ধৈর্য্য ধরার মানসিকতা, পরিশ্রম করার মানসিকতা, শুদ্ধভাবে গুছিয়ে কথা বলার চর্চা, সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা, গঠনমূলক সমালোচনা করার চেষ্টা করা, ইত্যাদি বিষয়ে নজর দিতে পারেন।
আপনার দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ এমন পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে মাঝে মধ্যে কথা বলুন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন। বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের অবস্থান কেমন বোঝার চেষ্টা করুন। এমন কেউ আপনার সীমানায় না থাকলে পত্র পত্রিকা, টকশো, লেখালেখি ইত্যাদিতে নজর রাখুন।
ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি করুন- ইংরেজিতে টুকটাক কথা বার্তা বলতে চেষ্টা করুন। ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং এ মোটামুটি ভালো হলে অনেক এগিয়ে যাবেন। এর জন্য নিয়মিত চর্চা করুন।
বিসিএস-এর বাইরেও অন্যান্য চাকরির ডোর ওপেন রাখুন। মনে রাখা ভালো, চার পাঁচ লাখ ছেলে মেয়ে চাইলেও আগামী ১০০ বছরেও সবার বিসিএস হবে না।
চাকরিটা আপনার আদৌও কতটুকু প্রয়োজন সেটা চিন্তা করুন। আপনি তো অন্য কিছু করেও চাকরির চেয়ে বেশি ভালো থাকতে পারেন।
একটাই জীবন। সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করুন, পিতা মাতা সহ নিজ পরিবারের প্রতি যত্নশীল হোন, মানুষের উপকার করতে চেষ্টা করুন এবং দেশটাকে ভালবাসুন!
বিসিএস প্রস্তুতি নির্দেশনা লিখেছেনঃ
নাজমুল হাসান ৩৮ তম বিসিএস সুপারিশপ্রাপ্ত ৩৮তম ক্যাডার ( শিক্ষা)
Also tag: bcs preparation bd, bcs preparation app, bcs preparation 2019, bcs preparation 2020, bcs preparation math, bcs preparation pdf, bcs preparation books, bcs preparation bangla, bcs preparation online, bcs preparation english, bcs preparation pdf download, bcs preparation guide,