ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম ও আইনী যে বিষয়গুলো জানা খুবই গুরূত্বপূর্নঃ ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম ও আইনী যে বিষয়গুলো জানা দরকার।
ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম ও আইনী যে বিষয়গুলো জানা দরকার
১. সর্বপ্রথম আপনাকে দেখতে হবে যে ডেভেলপার প্রতিস্টানের থেকে ফ্ল্যাট কিনতে চাচ্ছেন উক্ত ডেভেলপার প্রতিস্টানটি কি আইনানুগ নিবন্ধিত কিনা
২. তাদের আগের কোন অভিজ্ঞতা আছে কিনা, কিংবা কোন বদনাম আছে কিনা তা-ও দেখুন। অতীতে তারা কাউকে ঠকিয়েছে কিনা তাও দেখুন, কেননা ডেভেলপার প্রতিস্টান ভালোনা হলে আপনার সমস্যার আর অভাব থাকবেনা
৩. ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান রিহ্যাবের সদস্য কিনা তা-ও যাচাই করে নিন , কেননা সমস্যা হলে রিহ্যাব তা সমাধানে উদ্যোগ নেয়।
৪. এবার আপনাকে দেখতে হবে জমির দলিলপত্র । অর্থাৎ যে জমির উপরে আপনার ফ্ল্যাটটি থাকবে উক্ত স্থানের জমির দলিলপত্র গুলো যাচাই করে দেখুন , কেননা অনেকক্ষেত্রে দেখাযায় জামেলাপূর্ন জমিগুলো জমির মালিকরা ডেভেলপারদের দিয়ে থাকে । সুতরাং গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে জমির মালিকানা কাগজপত্র ঠিক আছে কি না
৫. জমির মালিকের সাথে ডেভেলপারের আমমোক্তারনামা ও চুক্তিপত্রটি সম্পাদিত হয়েছে উক্ত দলিলগুলো । এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা উক্ত চুক্তিপত্রে উল্লেখিত ক্ষমতার বাইরে ডেভেলপার কিছুই করতে পারবেনা । সুতরাং আপনি সহজেই বুজতে পারবেন ডেভেলপার প্রতিস্টানের এখতিয়ার এবং ক্ষমতা কতটুকু
৬. এরপরে দেখুন আপনি যেই ফ্ল্যাটটি কিনতে চাচ্ছেন উক্ত ফ্ল্যাটটি রাজউক কর্তৃক অনুমোদিত কিনা । রাজউক কর্তৃক অনুমোদনহীন ফ্ল্যাট না কেনায় উত্তম ।
৭. এখানে আরেকটি বিষয় দেখতে হবে তাহল, অনেক সময় দেখতে পাওয়া যায় রাজউক অনুমোদন দিয়েছে ৫ তলার কিন্তু ডেভেলপার প্রতিস্টান বিল্ডিং করেছে ৮ তলার । এক্ষেত্রে ৫ তলার উপরের তলাগুলোতে ফ্ল্যাট না কিনায় উত্তম
৮. উপরের সবকিছু ঠিক থাকলে এবার দেখুন আপনি যে ফ্ল্যাটটি কিনতে চাচ্ছেন উক্ত ফ্ল্যাটে কি কি মালামাল দেয়া হবে ফিটিংস কি উন্নতমানের এবং মানসম্পন্ন কিনা তা দেখে নিন কেননা উন্নতমানের যে টাইলস এর দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা সেই একই ধরনের নিন্মমানের যে টাইলস ১০০/-টাকায় পাওয়া যায় । তাই প্রথমে জেনে নিন কোন মানের ফিটিংস আপনার ফ্ল্যাটটিতে দেওয়া হবে
৯. আপনি কত বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনছেন, তার মধ্যে কমন স্পেস কতটুকু, আর মুল ফ্ল্যাট কতটুকু তা সুষ্পষ্টভাবে জেনে নিন , সরেজমিনে বুঝিয়ে দেয়ার সময় কমবেশী হলে, কি করতে হবে তা আগেই, নির্ধারন করে ফেলুন এবং চুক্তিপত্রে তা সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন
৭. উপরের সবকিছু আপনাকে সন্তুষ্ট করলে এবার জেনেনিন, ফ্ল্যাট কেনার সর্বশেষ কিস্তি দেয়ার সাথে সাথে ডেভেলপার প্রতিস্টানকি আপনার ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রেশন করে দিবে কিনা ?
৮. ফ্ল্যাট হস্তান্তরে বিলম্ব হলে ক্রেতা কি কি প্রতিকার পাবেন তার বিস্তারিত আগে থেকেই জেনেনিন । কেননা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায় নির্দিস্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার ৩-৪ বছরের মধ্যেও ফ্ল্যাট হস্তান্তর করছে না। প্রলুদ্ধ হয়ে তাড়াহুড়ো করে চুক্তি করে ফেলবেন না। প্রয়োজনে সমস্ত কাগজ পত্রগুলো একজন আইনজীবীকে দেখিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন এরপরে ফ্ল্যাট বুকিং দিন, ফ্ল্যাট ক্রেতা হিসাবে আপনার অধিকার
সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের তিন মাসের মধ্যে ডেভেলপার আপনাকে ফ্ল্যাটের দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশনের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে দেবে হস্তান্তরকালে ফ্ল্যাটের আয়তন কম-বেশি হলে তার মূল্য ক্রয়মূল্য অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
ডেভেলপার নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তরে ব্যর্থ হলে চুক্তিতে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণসহ সব অর্থ আপনাকে ছয় মাসের মধ্যে ফেরত দেবে । তবে চুক্তিতে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ না থাকলে তা পরিশোধিত অর্থের ওপর ১৫ শতাংশ হারে নির্ধারিত হবে।
যেকোন স্থাবর সম্পত্তি কেনার সময় তাড়াহুড়া করা উচিত নয়। বিশেষ করে জমিজমা এবং ফ্ল্যাট। কারণ, এসবের মালিকানা এবং কাগজপত্রে এত দিক দিয়ে ঘাপলা থাকার সম্ভাবনা থাকে যে, সেসব ঘাপলা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতেই আপনার লেগে যাবে 6 মাস। প্রয়োজনে 1 বছর পরে কিনুন তারপরও অভিজ্ঞতা অর্জন না করে বা অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ ছাড়া কিনবেন না। ফ্ল্যাট তো এমন এক জিনিষ যে, যদি ভালো জিনিষ না পান তাহলে আপনার জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে। আর অনুগ্রহপর্বক এমন ফ্ল্যাট কিনবেন না যে, পুরো বিল্ডিং একজনের ব্যক্তিমালিকানাধীন।মালিক শুধু টাকার প্রয়োজনে তার বিল্ডিংয়ের একটি বা দুটি ফ্ল্যাট সেল করতে চাচ্ছে।
কারণ, এমন বিল্ডিং এ আপনি ফ্ল্যাট কিনেও অনেক টা ভাড়াটিয়ার মতই থাকবেন। আপনার কর্তৃত্ব বলতে কিছু থাকবে না। এমনকি মালিক ফেরেশতার মত মানুষ হলেও না। কারণ, তার পরবর্তী প্রজন্ম ফেরেশতা বা ইবলিশ দুইটাই হতে পারে। তারা চাইলে আপনাকে এমন জ্বালাতে পারবে যে, বাধ্য হয়ে নিজের ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করবেন। আর কখনোই জমিজমা বা ফ্ল্যাট এই ভরসায় কিনবেন না যে, “সমস্যা হলে মামলা করে অধিকার আদায় করবো” । কারণ, বাংলাদেশের আইন আর বিচার নিয়মিত নিলামে কেনা বেচা হয়। যে বেশি টাকা দেয় তার পক্ষে যায়।