সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেয়া হয়। যেখানে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত একটি পরীক্ষা ও নিয়োগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ বছরের শুরুতেই আসবে ১০০০+ পদের জন্য সার্কুলার।তাই এই পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য প্রস্তুতি শুরু করুন এখন থেকেই।
দুই ধাপে মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হবে
- লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা।
- লিখিত পরীক্ষা হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে।
- মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে থাকেন পিএসসির বিজ্ঞ সদস্যগণ।
লিখিত (এমসিকিউ) ও মৌখিক পরীক্ষা পদ্ধতিঃ
২০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় বাংলা অংশে ৫০টি, ইংরেজি ৫০টি, সাধারন জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী) ৪০টি এবং গণিত ও মানসিক দক্ষতা থেকে ৬০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর কাটা যাবে। অর্থাৎ দুইটি উত্তর ভুল হলেই প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১ নম্বর কাটা যাবে।
এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর যোগ করে মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারিতে ১৩০ থেকে ১৪০ নম্বর পাওয়া মানে সেইফ জোনে থাকা। তবে এটা নির্ভর করে প্রশ্নের মানের উপর আর পিএসসির সিদ্ধান্তের উপর। ভাইভায় পাস মার্ক ২০। যেহেতু, এখানে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর যোগ হয় তাই যত বেশি নম্বর তোলা যায় ততই ভালো।
কি পড়বেন ও কিভাবে পড়বেন:
শুরুতে ৩৫তম থেকে ৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত সকল প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো বুঝে বুঝে সমাধান করুন। পাশাপাশি, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সরকারি কর্ম কমিশনের অধীনে যতগুলো পরীক্ষা হয়েছে সেই প্রশ্নগুলো খুব ভালভাবে দেখে নিন। এতে পিএসসির প্রশ্ন সম্পর্কে একটা ধারনা হবে। পরীক্ষায় এসব প্রশ্ন থেকে অনেক প্রশ্ন হুবুহু কমনও পাবেন।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতিঃ
বাংলা:
📌বাংলা অংশে ব্যাকরণের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড প্রণীত ব্যাকরণ বইয়ের সব অধ্যায় উদাহরণসহ ভালোভাবে পড়তে পারেন।
📌ব্যাকরণে ভাষা, বর্ণ, শব্দ, সন্ধি বিচ্ছেদ, কারক, বিভক্তি, উপসর্গ, অনুসর্গ, ধাতু, সমাস, বানান শুদ্ধি, পারিভাষিক শব্দ, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা,এককথায় প্রকাশ থেকে প্রশ্ন আসে।
📌সাহিত্য অংশে জানতে হবে কবি সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম ও জীবনী সম্পর্কে। এসএসসি বোর্ড বইয়ের লেখক পরিচিত ও কবি পরিচিতি অংশটুকু পড়তে হবে।
📌পিএসসি নির্ধারিত এগোরো জন সাহিত্যিক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে রাখা ভালো। সাহিত্যের যুগ, গল্প বা উপন্যাসের রচয়িতা, ছদ্মনাম, বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম, কবিতার লাইন উল্লেখ করে কবির নাম থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।
📌মোটকথা বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে খুব ভাল ধারণা থাকতে হবে।
ইংরেজি:
📌ইংরেজি গ্রামারের Right forms of verb, Tense, Number, Gender, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Spelling, Sentence Correction- থেকে প্রশ্ন আসে।
📌যে কোন গ্রামার বই থেকে গ্রামারের এই টপিকসগুলো উদাহরণসহ পড়ুন।এক্ষেত্রে একটি অনন্য সহায়ক হতে পারে এম আই প্রধান মুকুল স্যারের Classroom English Grammar বইটি।
📌এছাড়াও মুখস্থ করতে হবে Phrase and Idoims, Synonym, Antonym।
📌পাশাপাশি ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদও পড়তে হবে।
📌ইংরেজি সাহিত্য থেকে লেখকদের নাম, তাদের যুগ, তাদের বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম, কিছু লিটারেরি টার্মস, কে কে নোবেলজয়ী, কোন নাটক, উপন্যাস বা কবিতা কে লিখেছেন এবং এসব নাটক বা উপন্যাসের বিখ্যাত লাইন ও বিভিন্ন চরিত্র থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।
📌 ইংরেজি সাহিত্য সম্পর্কে বেসিক ধারণা নিবেন।
গণিত:
📌গণিতে মার্কস পাওয়া তুলনামূলক সহজ। প্রতিদিন কমপক্ষে তিন ঘণ্টা গণিত প্র্যাকটিস করা দরকার।
📌পাটিগণিতের পরিমাপ ও একক, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত, শতকরা, সুদকষা, লাভক্ষতি, ভগ্নাংশ থেকে প্রশ্ন আসে।
📌বীজগণিতের সাধারণ সূত্রাবলী থেকে প্রশ্ন থাকে।
📌 মুখে মুখে ও সূত্র প্রয়োগ করে সংক্ষেপে ফল বের করার প্র্যাকটিস করতে হবে, যাতে প্রশ্ন দেখামাত্রই সূত্র প্রয়োগ করে ফল বের করা যায়।
📌জ্যামিতির জন্য ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গক্ষেত্র, রম্বস, বৃত্ত ইত্যাদির সাধারণ সূত্র ও সূত্রের প্রয়োগ প্রাকটিস করবেন।
📌মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যবই যেমন অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করলে ভালো হবে। এছাড়া বাজারে গনিতের অনেক বই পাওয়া যায়। একটি বই ভাল করে অনুশীলন করুন।
মানসিক দক্ষতা:
📌মানসিক দক্ষতা থেকে ভাষাগত যৌক্তিক বিচার, সমস্যা সমাধান, বানান ও ভাষা, যান্ত্রিক দক্ষতা, স্থানাঙ্ক সম্পর্ক, সংখ্যাগত ক্ষমতা এবং সম্পর্ক (রক্ত, সময়) ও দিক নির্নয় ক্ষমতা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।
📌মানসিক দক্ষতার একটি বই নিয়ে বিগত বছরে বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় আশা প্রশ্নগুলো প্রথমে সমাধান করবেন।
📌পাশাপাশি যেকোনো একটা বই থেকে উক্ত অধ ভালভাবে অনুশীলন করলে আশাকরি ভাল মার্কস পাবেন।
সাধারণ জ্ঞান:
📌বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে প্রশ্ন বেশি আসে।
📌এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, বিখ্যাত স্থান, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ, জাতীয় দিবস, বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনী থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।
📌আর আন্তর্জাতিক অংশে বৈশ্বিক ইতিহাস, ভূ রাজনীতি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, দেশ, মুদ্রা, রাজধানী, আন্তর্জাতিক দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা ও বিশ্বের চলমান ও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে প্রশ্ন থাকে।
📌নবম দশম শ্রেণীর টেক্সট বইয়ের সাথে একটি রেফারেন্স বই বা গাইড বই থেকে এগুলো পড়তে পারেন।
📌সাম্প্রতিক বিষয়ের জন্য মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে পারেন পাশাপাশি প্রতিদিন পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে পারেন।
📌এছাড়াও বিজ্ঞান অংশের জন্য নবম দশম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান বইটি দেখতে পারেন।এ অংশে বিজ্ঞানের বেসিক থেকে প্রশ্ন করা হয়।
📌আর আই সি টি অংশের জন্য নবম দশম শ্রেণীর আইসিটি বইটি বেশ সহায়ক।
📌এ অংশে সাধারণত কম্পিউটারের হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার, প্রোগ্রামিং, কম্পিউটারের প্রজন্ম এগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়।
পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করুন এবং নিয়মিত পড়াশোনা করতে থাকুন।