বিসিএস পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ভাইভা। অনেকে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে পারলেও ভাইভায় গিয়ে খারাপ করে বসেন। কাক্সিক্ষত ক্যাডারপ্রাপ্তির জন্য লিখিতর পাশাপাশি ভাইভার মার্কসও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভাইভা ও লিখিত মিলিয়েই চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। ভাইভা বোর্ডে কী ধরনের প্রশ্ন করা হবে, এ নিয়ে অনেকের মধ্যে একটা ভীতিও কাজ করে। ভাইভা নিয়ে এ ভীতি মোটামুটি সবার মধ্যেই থাকে। তবে নিম্নোক্ত উপায়ে পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারলে এ ভয়কে সহজেই দূর করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
জানা থাকা চাই নিজের সম্পর্কে :
ভাইভা বোর্ডের অধিকাংশ প্রার্থীকেই নিজের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। তাই প্রার্থীকে নিজের সম্পর্কে খুঁটিনাটি সবকিছু জানা থাকাটা জরুরি। প্রার্থী নিজের সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা চরম বিরক্ত হন। নিজের সম্পর্কে তথ্যগুলো খাতায় একত্রে নোট করে লিখে বারবার চর্চা করতে হবে।
জন্মসন, ভাইভার তারিখে বয়স, নিজের নামে কোনো বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ব্যক্তি থাকলে তার সম্পর্কিত তথ্য, নিজ পরিবার, বাবা ও মায়ের পেশা, নিজের ভালো ও খারাপ দিক, শখ, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে হবে।
জানতে হবে নিজের এলাকা সম্পর্কেও :
নিজ উপজেলা ও জেলার আয়তন, জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত, প্রধান নদ-নদী, ঐতিহাসিক স্থান, জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিখ্যাত ও কুখ্যাত ব্যক্তি, বর্তমান ডিসি-এসপির নাম, জেলা-উপজেলায় কোনো মন্ত্রী থাকলে তার সম্পর্কিত তথ্যাদিও জানা থাকতে হবে।
নিজ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত তথ্য :
নিজ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, প্রতিষ্ঠার সন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও নিজ ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান, প্রথিতযশা শিক্ষক সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। তা ছাড়া নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয়ে অসামান্য অর্জন থাকলে তাও জানা রাখতে হবে।
নিজ পঠিত বিষয়ের ধারণা :
প্রার্থীকে নিজ পঠিত বিষয়ে বেসিক ধারণা রাখতে হবে। নিজের পঠিত বিষয় সম্পর্কে কোনো কিছু না পারলে ভাইভা বোর্ডে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। নিজের সাবজেক্ট সম্পর্কিত কয়েকটি বইয়ের নাম, সাবজেক্টের সঙ্গে প্রদত্ত ক্যাডারের সম্পর্ক প্রভৃতিও অনেক সময় জানতে চাওয়া হয়। তাই এসব প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই নোট করে গুছিয়ে রাখতে হবে।
ক্যাডার সম্পর্কিত তথ্য :
বিসিএসে কেন আসতে চান? কেন প্রশাসন/পুলিশ/ফরেন প্রথম পছন্দ? এসব প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই রেডি করে রাখতে হবে। ভাইভা বোর্ডের অধিকাংশ প্রশ্ন প্রথম পছন্দ থেকেই করা হয়ে থাকে। তাই ক্যাডার তালিকার প্রথম পছন্দ সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করুন। ওই ক্যাডারে গেলে আপনি কোন পদে যোগদান করবেন, যোগদানের পর কাজ কী হবে, পদক্রম, কাজের চাপ কেমন, সুবিধা-অসুবিধা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রভৃতি সম্পর্কে জেনে রাখুন। পরবর্তী দুটি পছন্দ সম্পর্কে বেসিক ধারণা রাখুন যাতে প্রশ্ন করলে আটকে না পড়েন। বাকি চয়েজগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত না জানলেও চলবে।
ভাইভা বোর্ডের কমন প্রশ্নগুলো সম্পর্কেও জেনে রাখুন :
সংবিধানের প্রস্তাবনা, মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ, সরকারি কর্মকমিশন ও সংবিধানের প্রাধান্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ এবং সংশোধনীগুলো জেনে রাখুন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডাররা, মুজিবনগর সরকার, বীরশ্রেষ্ঠদের নাম ও পদবি, মুক্তিযুদ্ধের পদকপ্রাপ্তের সংখ্যা প্রভৃতি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার সম্পর্কিত তথ্য, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা থেকে তথ্য, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও রাজনৈতিক জীবন এবং তার রচিত কয়েকটি বইয়ের নাম ও তার দেশ-বিদেশের অর্জিত পদক এবং খেতাব সম্পর্কিত তথ্য।
হ বর্তমান সরকারের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জগুলো, দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতি সম্পর্কিত তথ্যাদি।
হ দেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা, বিখ্যাত নারী ও তাদের কার্যক্ষেত্রগুলো।
তা ছাড়া নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস থাকাটাও জরুরি। ভাইভা বোর্ডের অনেক প্রশ্নই সাম্প্রতিক বিষয় থেকে করা হয়ে থাকে। আর এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে পত্রিকা পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
ভাইভা বোর্ডে অনেক সময় ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এসব প্রশ্নের উত্তরও করতে হয় ইংরেজিতে। তাই ভাইভা বোর্ডে ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। আয়নার সামনে নিয়মিত চর্চা ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা অর্জনে অনেকটা সহায়ক হতে পারে।
ভাইভার প্রস্তুতির জন্য কিছু বই আপনার সহায়ক হতে পারে।
যেমন- রাজনীতি কোষ, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, এমএম মুজাহিদ উদ্দীনের লেখা ‘ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি’ ইত্যাদি। পারলে এগুলো সংগ্রহ করে রাখুন।
সর্বোপরি ভাইভায় ভালো করার জন্য নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাটা জরুরি। আমি পারবই, আমাকে পারতেই হবে- এ ধরনের মনোভাব প্রার্থীকে বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে দেয়। সব সময় এ পজিটিভ চিন্তাটা মাথায় রাখুন। তা হলে সাফল্য আপনাকে ধরা দেবেই ইনশাআল্লাহ। সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।
কালের কণ্ঠ
বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতি
মো. দিদারুল ইসলাম
৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে ৮ম স্থান অধিকারী।