বাংলাদেশে সরকারি চাকরির সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বিসিএসের জন্য রেকর্ডসংখ্যক আবেদন পড়েছে। ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করেছে প্রায় ৪ লক্ষ চাকুরিপ্রার্থী, যা গতবারের চেয়ে প্রায় দেড় লাখ বেশি। অথচ পদ রয়েছে মাত্র ২ হাজারটির মত। এবারই প্রথম চার লাখ ক্রস করেছে আবেদন. কিন্তু পদ সংখ্যা কম.
গত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষাতেই দেখা যাচ্ছে আবেদনকারীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সরকারি চাকরির প্রতি আগে থেকেই অনেকের আগ্রহ থাকলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগ্রহ এতটা বাড়ার কারণ কী?
এর উওর খুজতে গিয়ে বের হয়েছে কিছু তথ্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ঢোকার জন্য প্রতিদিন ভোর থেকে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকেন অনেকে। শুক্রবার বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির দরজা খোলে বিকেল তিনটায়, তখনো ভিড় কম নয়।
দরজায় ব্যাগ কাঁধে যারা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন, তাদের অনেকে দিনের বড় সময় কাটান এই লাইব্রেরিতে এবং সেটা অ্যাকাডেমিক কারণে নয়, তারা পড়াশোনা করেন বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য।
সরকারি চাকরির জন্য এই কঠোর অনুশীলনের কারণ জানতে চাইলে তারা বললেন সরকারি চাকরির নিরাপত্তা, বেতন এবং পারিবারিক চাপের কথা।
আসুন দেখি এসকল বিষয় গুলো
“২০১৫ সালে বেতন কাঠামো পুনর্গঠন করায় এখন সরকারি চাকরির বেতন বেসরকারি চাকরির সমান হয়ে গেছে। এজন্য প্রতিযোগিতাও এখন বেশি।”
“পরিবারের মানসিকতা হলো যে সরকারি চাকরি করতে হবে, ক্ষমতা থাকতে হবে, বিয়ে করার জন্য এই চাকরির গ্রহণযোগ্যতা বেশি,” বলছিলেন কয়েকজন আবেদনকারী।
সরকারি চাকরির মাধ্যমে সেবাপ্রদানের কথাও বললেন কেউ কেউ।
ক্যারিয়ারের শুরুতে ভালো বেতনে বেসরকারি চাকরির সুযোগ কম, অন্যদিকে চাকরি না করে নিজ থেকে উদ্যোক্তা হবার ঝুঁকি নিতে চান না অনেকে।
“অনেকেই মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যে ৪ থেকে ৫ বছরের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে সেসময়ে আমার পরিবার কতটা সাপোর্ট দিতে পারবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন অপর একজন।
সরকারি চাকরির প্রতি শিক্ষার্থীদের একটি অংশের আগ্রহ সবসময়ই ছিল, তবে কয়েক বছর আগেও এতটা আগ্রহ দেখা যায়নি।
অনেক শিক্ষার্থী পাশ করার পর ৪-৫ বছরও কাটিয়ে দিচ্ছেন প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরির জন্য। অন্যদিকে অনেকে বেসরকারি চাকরি ছেড়েও সরকারি চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন।
এক পযায়ে
কথা হচ্ছিলো চট্টগ্রাম জেলার সহকারী কমিশনার তানিয়া মুনের সাথে যিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন বছরখানেক আগে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলছিলেন চাকরির নিরাপত্তা, অবসরের পর পেনশন ও গ্রাচুইটি সুবিধা এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার কথা।
“আমি আগে যেখানে ছিলাম সেটাও মর্যাদাপূর্ণ ছিল। কিন্তু একইসাথে মর্যাদা, বেতন কাঠামো এবং জব সিকিউরিটি সবকিছু মিলিয়েই এটা আমাকে আকর্ষণ করেছে,” বলেন তানিয়া মুন।
এরকম আরো অনেক উদাহরণ এখন দেখা যাচ্ছে, যারা অন্য চাকরি ছেড়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ মনে করেন, এর পেছনে সরকারি চাকরিতে বেতন বাড়ানো একটি বড় কারণ। পাশাপাশি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম থাকায় চাকরি তৈরি হচ্ছে না এবং উদ্যোক্তা হবার ঝুঁকিও অনেকে নিচ্ছেন না।
“পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসেবেও দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না এবং চাকরির সুযোগ কম। ফলে সরকারেরই যতটুকু বিনিয়োগ সেজন্য সেখানে একটা ঝোঁক বেশি।”
অধ্যাপক আকাশ মনে করেন, সরকারি চাকরির প্রতি এতটা আগ্রহ বেসরকারি খাতের একটি অনভিপ্রেত ব্যর্থতারও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়লে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি মনে করছেন।
আশা করি আপনাদের বিষয় টি বুঝাতে পেরেছি