ভাইভা পরীক্ষায় ভালো করার উপায়
শিক্ষাগত জীবনে ভালো ফলাফল
এবং মেধা বা যোগ্যতা থাকা
সত্ত্বেও অনেকেই ভাইভা বোর্ডে
নিজেকে যোগ্য করে উপস্থাপন
করতে না পারার কারণে চাকরি
হাতছাড়া হয়ে যায়। লিখেছেন
আরাফাত শাহরিয়ার
ভাইভা বোর্ডে যাঁরা থাকেন, তাঁরা
কিন্তু নানাভাবে যাচাই-বাছাইয়ের
মাধ্যমেই আপনাকে তাঁদের
প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেবেন। একজন
চাকরিপ্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার
পাশাপাশি তাঁর স্মার্টনেস, উপস্থাপন
কৌশল, বাচনভঙ্গি এসব বিষয়ও কিন্তু
কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভাইভা বোর্ডে ঢুকেই
অনেকে নিজের অজান্তে প্রথমেই
নিজেকে অযোগ্য প্রমাণ করেন বসেন।
নিয়োগদাতারা তেমন কোনো প্রশ্ন
না করেই বা সৌজন্যতার খাতিরে দু-
একটি প্রশ্ন করেই বিদায় করে দেন। এ
রকম পরিস্থিতি এড়াতে ও নিজেকে
যোগ্য করে উপস্থাপন করার জন্য
জেনে নিন কিছু কৌশল।
১. চাই ভালো জীবনবৃত্তান্ত
ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজেকে
উপস্থাপনার আগেই জীবনবৃত্তান্ত বা
বায়োডাটা উপস্থাপন করার প্রয়োজন
হতে পারে। এ জন্য জীবনবৃত্তান্ত
তৈরির সময় আপনাকে অবশ্যই কৌশলী
হতে হবে। চাকরিপ্রার্থীর যেটা
ভালো অর্জন, তা জীবনবৃত্তান্তে
আগে লিখতে হবে। আর এতে যেন
প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকে, সেদিকে
খেয়াল রাখতে হবে। জীবনবৃত্তান্তের
সঙ্গে একটি ফরওয়ার্ডিং লেটারও
দিয়ে দিতে হবে। কোনো বানান বা
ব্যাকরণগত ভুল যাতে না হয় সে
বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
জীবনবৃত্তান্তে অনেকই ভুল তথ্য
উপস্থাপন করেন এবং নিজেকে যোগ্য
প্রমাণের জন্য সত্য নয় এমন অনেক তথ্য
সন্নিবেশিত করেন। এটি মোটেই উচিত
নয়। নিয়োগকর্তারা নিয়োগের পরেও
যদি আপনার ভুল তথ্য উপস্থাপনের
বিষয়টি ধরে ফেলেন, তাহলে কিন্তু
পরবর্তীতে চাকরি চলে যাওয়ারও
আশঙ্কা থাকে।
২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে
ভুলবেন না
ভাইভা বোর্ডে আপনার শিক্ষাগত
যোগ্যতার ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজনীয়
সব কাগজপত্র সঙ্গে নিতে হবে।
চাকরির আবেদনের সময় এসব
কাগজপত্র দিতে হয়, তাই এসব
কাগজপত্র নিয়োগদাতাদের কাছে
থাকলেও এসব সঙ্গে করে নিতে হবে।
ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা যেকোনো
সময় এসব চেয়ে বসতে পারেন। এ ছাড়া
সঙ্গে জীবনবৃত্তান্ত ও ছবিও রাখুন।
আর একটি কলমও সঙ্গে রাখা দরকার।
আর এসব রাখার জন্য ভালো মানের
একটি ব্যাগ বা ব্রিফকেস সঙ্গে
রাখতে পারেন। তবে একটি বিষয়
সচেতন থাকা জরুরি, হাতের ব্যাগ
টেবিলের ওপর না রেখে পাশে
কোথাও রাখা উচিত।
৩. কান্তিভাব ঝেড়ে ফেলুন
সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আপনার
মধ্যে যেন কোনো প্রকার কান্তিভাব
না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
কেউ কেউ নির্দিষ্ট সময়ের ঠিক আগ
মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে ভাইভা বোর্ডে
এসে উপস্থিত হওয়ার কারণে শরীর
ঘামে একাকার হয়ে যায়। তাই
নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত আধাঘণ্টা
আগে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হয়ে
নিজেকে প্রাণবন্ত করে তুলুন।
প্রয়োজনে হাত-মুখ ধুয়ে নিনে পারেন।
অনেকে সারা রাত জেগে বা গভীর
রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করে সকালে
ভাইভা দিতে আসেন। এতে চেহারায়
কান্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
নিজেকে সতেজ করে উপস্থাপনের
জন্য ভাইভার আগের রাতের ভালো ঘুম
খুব জরুরি। তাই বেশি রাত না জেগে
ঘুমিয়ে পড়ে সকালে ভালোভাবে
গোসল করে ভাইভা বোর্ডের উদ্দেশে
রওনা হোন।
৪. পরিচ্ছন্নভাবে সঠিক সময়ে
অনেকেই নিদিষ্ট সময়ের পরে
সাক্ষাৎকার বোর্ডে এসে হাজির হন।
এই সময়মতো আসতে না পারাটাই
আপনার অযোগ্যতা প্রমাণের জন্য
যথেষ্ট। ভাইভা বোর্ডে কোনোক্রমেই
দেরি করে উপস্থিত হবেন না।
দেরিতে এলে নিয়োগদাতারা ভাইভা
নাও নিতে পারেন বা ভাইভার আগেই
বাদ দিয়ে দিতে পারেন। নিজেকে
পরিপাটিভাবে উপস্থাপন করার
গুরুত্বও কিন্তু অনেক। পরিষ্কার-
পরিচ্ছন্ন, শালীন ও মার্জিত পোশাক
পরে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হতে
হবে। পোশাকই কিন্তু আপনার
ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেবে।
৬. আঞ্চলিকতা পরিহার করুন
ভাইভা দেওয়ার সময় কথা বলার
ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা যেন প্রকাশ না
পায় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।
কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হবে,
যেন আঞ্চলিক টান না এসে যায়।
প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় শুদ্ধ
উচ্চারণে কথা বলাও জরুরি। এ জন্য
আগে থেকেই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার
অভ্যাস করতে হবে। ইংরেজি বলার
সময়ও উচ্চারণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে
হবে।
৭. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা নিন
ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হওয়ার আগে
নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে
যথাসম্ভব জেনে নিতে হবে। যদি সম্ভব
হয়, ভাইভা বোর্ডে কারা কারা
থাকবেন, সে সম্পর্কেও জেনে নেওয়া
ভালো। ভাইভার আগে হন্তদন্তভাবে
হাজির না হয়ে হাতে সময় রেখেই
যথাস্থানে উপস্থিত হতে হবে।
সবচেয়ে ভালো হয়, আগের দিনই
পরীার কেন্দ্রটি দেখে আসা। এ
ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।
৮. ধূমপান করে ভাইভায় যাবেন না
ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের আগে
কোনোক্রমেই ধূমপান করবেন না।
ভাইভার আগে ধূমপান পরিহার করাটাই
হবে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। আপনি
যদি ধূমপান করে আসেন আর ধূমপানের
কারণে আপনার মুখ থেকে যদি
সিগারেটের গন্ধ বেরোতে থাকে, তবে
ভাইভা বোর্ডে যাঁরা থাকবেন তাঁরা
বিষয়টি সহজভাবে নেবেন না। এটিই
আপনার অযোগ্যতা প্রমাণের জন্য
যথেষ্ট। এ ছাড়া অনেকের পান
খাওয়ারও অভ্যাস রয়েছে। এক্ষেত্রে
এটিও পরিহার করতে হবে।
৯. সংক্ষেপে ও হাসিমুখে উত্তর দিন
ভাইবা বোর্ডে যে বিষয়ে প্রশ্ন করা
হয়েছে, শুধু সে বিষয়েই উত্তর দিতে
হবে। বেশি কথা বলা বা অপ্রাসঙ্গিক
কোনো বিষয়কে টেনে আনা ঠিক হবে
না। আবার গোমড়ামুখে বসে থাকলেও
কিন্তু তা অযোগ্যতা হিসেবে
বিবেচিত হবে। ইন্টারভিউ বোর্ডের
সদস্যরা বেশি কথা বলা যেমন পছন্দ
করেন না আবার গোমড়ামুখের
মানুষকেও পছন্দ করবেন না। আর
ইন্টারভিউ বোর্ডে একটি বিষয় মেনে
চলার চেষ্টা করুন, তা হলো সব প্রশ্নের
উত্তর দেওয়ার সময় হাসিমুখে উত্তর
দিন। তবে অকারণেও কিন্তু আবার
হাসা যাবে না। আর একটি বিষয়, সব
প্রশ্নেরই যে উত্তর জানা থাকবে তা
কিন্তু নয়। না পারলে বিনীতভাবে
বলতে হবে- সরি স্যার, পারছি না।
১০. উত্তেজিত হওয়া যাবে না
ভাইভা বোর্ডে প্রার্থীর মানসিক
স্থিতিশীলতা, সমস্যা সমাধানের
যোগ্যতা- এসব বিষয় যাচাইয়ের জন্য
অনেক সময় অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা
হয়ে থাকে। এ সময় কোনোক্রমেই
উত্তেজিত হওয়া যাবে না। অনেক সময়
প্রার্থীর মানসিক মতা যাচাইয়ের
জন্য একসঙ্গে অনেকেই প্রশ্ন করে
বসেন, এমনকি অনেক সময় বিব্রতকর
প্রশ্নও করা হয়। এ সময় কোনোক্রমেই
মাথা গরম না করে সবকিছু সহজভাবে
নিতে হবে এবং শান্তভাবে তাঁদের সব
প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
১১. বিনীতভাবে নিজেকে
উপস্থাপন করুন
ভাইভা বোর্ডে সব প্রশ্নের উত্তর
বিনীতভাবে দিতে হবে। ইন্টারভিউ
বোর্ডে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময়
সোজা হয়ে বসতে হবে। চেয়ারে
হেলান দিয়ে বসাটা ঠিক হবে না।
এতে চাকরিপ্রার্থী সম্পর্কে বিরূপ
মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে। ভাইভা
শেষে হাত মেলাতে পারেন, তবে
সেটা পরিস্থিতি অনুযায়ী। অনেকেই
স্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে নাটকীয়
ভঙ্গিতে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার
চেষ্টা করেন। নিজেকে অভারস্মার্ট
ভাবা ঠিক নয়। সুন্দর, সাবলীল ও
বিনীতভাবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার
মাধ্যমেই যোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ
দেখানো যেতে পারে।
১২. মিথ্যার আশ্রয় নেবেন না
ইন্টারভিউ বোর্ডে কখনোই নিজের
যোগ্যতার বিষয়ে কোনো মিথ্যার
আশ্রয় নেবেন না। কোনো মিথ্যা তথ্য
আপনার জন্য সমূহ বিপদ ডেকে আনতে
পারে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে না হয়
চাকরি হলো, এ ক্ষেত্রে পরে আপনার
সমস্যা হবে। সেটি প্রকাশ পেলে
আপনার প্রতি নিয়োগদাতা
প্রতিষ্ঠানের আর কোনো বিশ্বাস
থাকবে না। এমনকি আপনার চাকরিও
চলে যেতে পারে। আর একটি বিষয়
আগে থেকেই জেনে নিতে হবে,
চাকরির ক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব কী
কী হবে ও বেতনের কাঠামো কেমন
হবে, বেতনভাতা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা
না করাই ভালো। তবে এটাও বলা যাবে
না, আপনারা ‘যা দিবেন তাই’। এ
ক্ষেত্রে এটি দুর্বলতার প্রকাশ হতে
পারে। আর হ্যাঁ, ভাইভা বোর্ড থেকে
বেরোনোর সময় অবশ্যই সবাইকে কিন্তু
ধন্যবাদ দিয়ে বেরোতে হবে।